নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী উপজেলা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া। এখানে সময়ের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে রপ্তানিকারক ও উৎপাদনশীল নিত্যনতুন শিল্প কারখানা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে শিল্প কারখানার হার বাড়লেও প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকুরি পাচ্ছেনা এলাকার মেধাবী, শিক্ষিত কিংবা প্রশিক্ষিত যুবক সম্প্রদায়। এই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানায় শুধুমাত্র এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার কারণে এখানকার দক্ষ ও অদক্ষ লোকজনদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছেনা বলে হতাশা প্রকাশ করেন শিল্প শ্রমের সাথে জড়িত এখানকার শ্রমজীবী সমাজ। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নুরে আলম বলেন, ৪৩ তম বিসিএস প্রিপারেশন নিচ্ছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সি.জি.পিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ তবে চাকুরি প্রত্যাশায় স্থানীয় বলে এলাকায় স্থাপিত কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাচ্ছিনা। অপরদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম অভিযোগের সুরে বলেন, এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইন্টারভিউতে উপস্থিত হয়ে ভাল পারফর্ম করলেও চাকুরি হচ্ছেনা লোকাল ছেলে বলে। স্থানীয় নাগরিক লোকমান হোসেন জানান, এমন অবস্থায় এলাকায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক হতাশায় মাদক ব্যবসাসহ সমাজে নানারকম অপকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, গজারিয়া উপজেলায় কৃষি ও অকৃষি জমি ভরাট করেই দিনে দিনে নানা শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এতে একদিকে স্থানীয়দের যেমন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য পরিবেশে মিশে স্থানীয় জনজীবন বিপন্ন করে তুলছে। আমাদের বিপাকে ফেলে শিল্প মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। কিন্তু আমাদের সন্তানদের কর্মের সুযোগ করে দিচ্ছে না। অচিরেই এমন ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন চায় গজারিয়াবাসী। শুধু তাই নয়, এখানে প্রায় অর্ধশতের উপরে শিল্পকারখানা রয়েছে। তারা স্থানীয়দের চাকুরী দেবার বেলায় প্রাধান্য দেয় না। আমি জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ও উন্নয়ন কমিটির সভায় বলেছি। গজারিয়ায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পকারখানাগুলোতে স্থানীয় যুবকরা চাকুরী পাচ্ছেনা কেন তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছি সংশ্লিষ্টদের। কারখানার মালিকদের উচিৎ চাকুরীর ক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রধান্য দেওয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গজারিয়া উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ স্পষ্ট। গজারিয়ায় গত দশকে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও আশানুরূপ ভাগ্য ফেরেনি স্থানীয় শিক্ষিত অর্ধ-শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বেকার যুবসমাজের। এদিকে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকরা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, আমাদের কৃষিকাজে ব্যবহৃত ফসলি জমি যেখানে আমাদের সন্তানরা তাদের রিজিকের সন্ধানে কাজ করার কথা। আমাদের ভিটেমাটি যেখানে আমাদের বসবাস করার কথা। সেখানে বলা চলে প্রায় জোর করেই দখলে নিয়ে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানিগুলো। অথচ আজকে আমাদের সন্তানদেরই এখানে কর্মসংস্থান হচ্ছেনা। কোম্পানিগুলোয় স্থানীয় বলে তারা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেনা।