মুন্সীগঞ্জে করোনা আতঙ্কেও থেমে নেই দিনমজুর শ্রমিকেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারন করেছে প্রানঘাতি নোভেল করোনাভাইরাস। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। সারা দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও মার্কেট। শুধুমাত্র খোলা রাখা হয়েছে নিত্যপন্যের মুদি, কাঁচা সবজির বাজার ও ওষুধের ফার্মেসী। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। জনসাধারনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ বাড়ীতে অবস্থান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাস্তায় চলাচলেও রয়েছে বিধি নিষেধ। তবে প্রানঘাতি এই করোনাভাইরাস দমিয়ে রাখতে পারেনি দিনমজুর শ্রমিকদের। মুন্সীগঞ্জ জেলাটি আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ বছর ৩৮ হাজার ৮ শত ২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
এই আলু উত্তোলন এবং কোল্ড স্টোর পৌঁছানোর কাজে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২ লাখ নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করে। আলু উত্তোলনের শ্রমিকরা এখন চলে গেছে। রয়ে গেছে আলু পরিবহন শ্রমিকরা।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার চলাঞ্চলের মোল্লাকান্দি, আধারা, বাংলাবাজার, শিলই, টঙ্গিবাড়ী, উপজেলার যশলং, কামারখাড়া গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে আলু পরিবহন শ্রমিকরা করোনা আতঙ্কের মধ্যেও কাজ করছেন। শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজশাহী, রংপুর, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক এ বছর সাইকেল দিয়ে আলু পরিবহন কাজে নিয়োজিত ছিলো। সম্প্রতি করোনা আতঙ্কে অনেক শ্রমিক নিজ জেলায় চলে গেছে। অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, গাইবান্ধার মফিজুল, শাহীন, মান্নান, মিন্টু, রাজশাহীর মজনু, সাইফুলসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক সাইকেল যোগে আলুর বস্তা নিয়ে ছুটে চলছে হিমাগারগুলোতে। কৃষকের জমি থেকে একজন শ্রমিক তার বাই সাইকেলে ৫টি করে বস্তা নিয়ে রওয়ানা করেছে। একজন শ্রমিক প্রতিদিন দিনে ১৫ টিপ মারতে পারে। আধা ঘন্টার দূরত্বে বস্তা প্রতি দাম ২০-২৫ টাকা। এভাবে সারাদিন কাজ করার পর একেকজন শ্রমিক দৈনিক ১২শ থেকে ১৫শ টাকা আয় করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক এভাবেই প্রতিদিন কাজ করছেন।
একাধিক শ্রমিক জানান, করোনার আতঙ্কে অনেক শ্রমিক দেশে চলে গেছে। আমরা ঝুঁকিতে আছি জেনেও কাজ করছি। এখন কাজের মৌসুম, প্রতিদিন আয় প্রায় ২ হাজার টাকা। ঘরে বসে থাকলে কি সরকার সব খরচ দিবে? আমরা খেটে খাওয়া মানুষ দিন আনি দিন খাই। তাছাড়া আমরা চলে গেলে কৃষকরা আলু নিয়ে বিপাকে পড়বে। বাধ্য হয়েই আমরা আলুর বস্তা পরিবহন করছি।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহাম্মেদ জানান, সরকারী করোনা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। খেটে খাওয়া দিনমজুরদের জন্য প্রচুর পরিমানে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে সরকারী ত্রাণ সামগ্রী খেটে খাওয়া মানুষদের পরিবারের জন্য চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিয়েছে। করোনার সংক্রামণ এড়াতে শ্রমিকদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন।