সিরাজদিখান প্রাণি সম্পদ অফিসের পিয়ন যখন ডাক্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজদিখানে ভুল চিকিৎসায় একটি ফিজিয়ান শংকর জাতের গাভীর মৃত্যু হয়েছে। যার ওজন প্রায় সাড়ে ৫ মণ। এ জাতের গাভী প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। এতে কৃষকের প্রায় ২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের চিকিৎসকের পরিবর্তে অফিস সহকারি (পিয়ন) রফিকুল ইসলাম জুয়েলের ভুল চিকিৎসায় গাভীটির মৃত্যু হয়েছে বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে গত এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের ছোট পাউলদিয়া গ্রামে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ একলাখ টাকা জরিমানা করে মীমাংসা করে দিয়েছিলেন। সেটির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২ মাস পরে গতকাল মঙ্গলবার বয়রাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ আঙ্গিনায় গাভীর মালিক ছোট পাউলদিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি একজন সাধারণ কৃষক। অন্যের জমিতে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনরকম খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। ভবিষ্যতের আশায় তার শেষ সম্বল বলতে এই গাভীটি ছিল। ৩ বছর আগে একটি মেয়ে বাছুর কিনে এনে এতটা বড় করেছেন তিনি। গাভীটি বাচ্চা প্রসবের ৩-৪ দিন আগে ওলানে ভাড়ি দেখা দিলে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের মাঠকর্মী মঈনুল ইসলামকে ফোন দেন বিল্লাল। সে সময় করোনা পরিস্থিতিতে অফিসে কর্মকর্তা ছিলেন না। মাঠকর্মী মঈনুল নারায়ণগঞ্জ থাকায় পিয়নকে পাঠান এবং টেলিফোনে পরামর্শ দেন। প্রথমে ১৯ এপ্রিল পিয়ন জুয়েল ইনজেকশন ঔষধ দিয়ে চলে আসেন। পরদিন গাভীটি আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে পিয়ন এন্টিবায়োটিকসহ কয়েকটি ইনজেকশন প্রয়োগ করে চলে আসেন। তার একঘন্টা পর গাভীটি আরো অসুস্থ হয়ে মারা যায়। বিল্লাল হোসেন জানান, আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করতাম, গাভীটিকে ময়না তদন্ত করাতাম। কিন্তু মীমাংসার প্রস্তাবে করিনি। একলাখ টাকা মীমাংসা হয়েছে। একটি চেক দিয়েছে সে একাউন্টে টাকা নেই। ১০ হাজার টাকা নগদ দিয়েছিল। এখন আর খোঁজ নেয়না। উল্টো বলে তদন্ত করা হবে। এ ব্যাপারে পিয়ন রফিকুল ইসলাম জুয়েল জানান, অফিস থেকে তাকে চিকিৎসায় অনেক জায়গায় যেতে হয়। সে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছে কিন্তু কেন গরু মারা গেল সে জানে না। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তাদের লোকজনের চাপে মীমাংসা মেনে এক লাখ টাকার চেক দিতে বাধ্য হয়েছি। চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি কে দিয়েছে এবং আপনার কি ট্রেনিং আছে। সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে জুয়েল বলে আমাকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনারা যা পারেন করেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী জানান, ঘটনার সে সময় আমি অফিসে ছিলাম না। আমি ত্রাণের কাজে উপজেলার রাজানগর ছিলাম। আমাদের লোকবল কম, ৪টি পদ শূন্য ২ জন ডেপুটেশনে আছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে আমি, একজন মাঠকর্মী ও ভেটেরিনারি সার্জন কাজ করছি। তাই লোকবল না থাকায় হয়তো সে গিয়েছে। মাঠকর্মীর পরামর্শে চিকিৎসা দিয়েছে। তার রাইট নাই চিকিৎসা দেওয়ার। আমি কোন অনুমতি দেই নাই। জুয়েলের বিরুদ্ধে গত দুই বছরে আরো অনেক অভিযোগ আছে আমি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। কারণ সরকারি চাকুরির কিছু নিয়ম কানুন আছে। বয়রাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী আলাউদ্দিন জানান, ঘটনার সময় উত্তেজিত লোকজন জুয়েলকে আটকে রাখে এবং মারধর করার চেষ্টা করলে আমরা তাকে নিরাপদে রাখি। সে ভুল স্বীকার করে এবং সে সময় দুই পক্ষ সমাধান চাইলে আমিসহ ৪-৫ জন ইউপি সদস্য ও গন্যমান্যদের সাথে নিয়ে একটা সমাধান করে দেই। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করি। কিন্তু ১০ হাজার টাকা দিয়ে আর খোঁজ নেয়নি। বিল্লাল খুবই গরীব মানুষ এবং জুয়েল পিয়নের চাকুরী করে। দুজনই অসহায়। তাই গাভীটির ২ লাখ দাম ধরে সর্বসম্মতিক্রমে কৃষকের একলাখ ক্ষতি ও পিয়নের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এক লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে সেটি পাশ করেনি। যেভাবে এই গরীব কৃষক বাঁচতে পারে সেদিকটা বিবেচনা করা উচিৎ।
এলাকাবাসী অনেকে জানান, গত দুই বছরে এই অফিস সহকারি রফিকুল ইসলাম জুয়েল বালুচরে একটি গরু, গোড়াপীপাড়া গ্রামে একটি গরু, রথবাড়ি গ্রামে একটি ছাগল ভুল চিকিৎসা করে জরিমানা দিয়েছে। গত ৫ মাস আগে ফুরশাইল গ্রামের গুরুপদ সরকারের একটি গরু ভুল চিকিৎসায় মারা গেলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা থাকলেও ২৭ হাজার টাকা দিয়ে আর দেয়নি। এত ঘটনার পরও সে এ অফিসে বহাল তবিয়তে রয়েছে। অফিস থেকে তাকে ট্রান্সফারের জন্য উপরে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, কোন গরু ছাগলের চিকিৎসায় গ্রামে গেলে এক হাজার টাকার কম সে ভিজিট না নিয়ে ছাড়েন না।