নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশায় চিকিৎসা সেবা প্রদান দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মূল্যবান ঔষধপত্রসহ সরঞ্জামাদি ঝুঁকির মধ্যে রেখে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৮০ সালে নিচু জায়গায় নির্মিত হওয়ায় প্রতিনিয়তই অফিস ভবন ও বাস ভবন ২টি একটু বৃষ্টি হলেই ২ হতে ৩ ফুট কেন্দ্রের ভাগ পানিতে ডুবে যায়। ১৯৮০ সালে নির্মিত ভবন দুইটিতে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। ভিতরের ছাদ খসে পড়ছে এবং ছাদ চুইয়ে ভিতরে পানি পড়ে। যার ফলে কেন্দ্রটি একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রে আগত মা ও শিশু, সাধারন রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। উক্ত কেন্দ্রের কর্মরত ডা. ও কর্মচারীদের চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টিতে জলাশয় তৈরি হওয়ায় জলাশয়ে বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি এমনকি বিষাক্ত সাপেরও চলাচল দেখা যায়। এছাড়া দেয়াল ও ছাদের প্লাস্টারসহ বড় বড় অংশ খসে ভেঙ্গে পড়ে। ঔষধপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটি প্রতিনিয়ত পরিচালনা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ওয়ারিং করা তার ও বোর্ড ঝুলে পড়েছে। যেকোন সময় মারাত্মক দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছে। ফলে গরিব রোগীরা এখানে এসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। উক্ত কেন্দ্রের ৬টি কক্ষবিশিষ্ট দুইতলা ভবনটি পুনঃ নির্মাণের ব্যবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সদিচ্ছার প্রতিফলন স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গাঁওদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. আলী আহম্মেদ ঢালী বলেন, এই কেন্দ্রে প্রতিদিন শত শত রোগীর চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান করা হয়। এখানে সকল প্রকার ঔষধ রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ডায়বেটিস পরীক্ষা, ওয়েট মেশিন, প্রেসার মাপার যন্ত্র, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে দুঃখের বিষয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামো ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী। প্রয়োজনীয় সামগ্রী নেই, নিজে যেই চেয়ারে বসে চিকিৎসা দেই সেই চেয়ারটিও ভাঙ্গা। উক্ত ভবন দুইটি ২২/০৮/২০০২ইং সালে মেডিকেল অফিসার, (এমসিএইচ-এফপি) লৌহজং,মুন্সীগঞ্জ কেন্দ্রটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবন দুইটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে এবং ভবন দুইটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র ভবন নির্মাণের জন্য জোর সুপারিশ করেন। আমি ০৮/১১/২০১৬ইং তারিখে বরাবর চেয়ারম্যান গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও চেয়ার টেবিলসহ লিখিত চাহিদার বিবরণ পেশ করি। ১৭/০৭/২০১৯ইং বরাবর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জে কেন্দ্রটি নোংরা পরিবেশ হতে রক্ষা এবং কেন্দ্রে কর্মরত কর্মচারীগণের বসবাসের সু-ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন পেশ করি। এ ব্যাপারে ইউনিয়র পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী। যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থেকে স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হয়। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যেও সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। এখানে রোগীরা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করার জন্য আসে। কিন্তু এ কেন্দ্রে এসেই শুরু হয় আতঙ্ক। ভয়াবহ ভগ্নদশা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান অন্তরায়। গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা যখন সরকারের ডাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসে তখনই এ ধরনের অজানা আতঙ্ক সত্যিকার অর্থে খুবই দুঃখজনক। সরকার প্রতি বছর বাজেট কর্মসূচি ঘোষণা করলেই দেখা যায়, প্রায় ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদান করেন। অথচ দীর্ঘকাল ধরে গাঁওদিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। গ্রামের মানুষ এখন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রমুখী। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লায়লা সুলতানা বলেন, অবকাঠামোর পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরে ইতিমধ্যে একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের জন্য একটি ২ তলা ভবন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি, খুব শীঘ্রই পুনঃর্নিমাণ কনস্ট্রাকশন কাজ শুরু হবে। স্থানীয়রা জানান, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। অসহায় মহিলা ও গরিব লোকজন এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে থাকে। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি’র নিজের এলাকা। তারপরেও ভবন সংস্কারের কাজ না হওয়া দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এ কেন্দ্রে একজন উপ সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিকেল অফিসার), একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, একজন এমএলএসএস (নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন আয়া চারটি পদ রয়েছে। তন্মধ্যে একজন আয়া এবং একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার চিকিৎসা কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত থাকলেও সেখানে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও এমএলএসএস (নিরাপত্তা প্রহরী) পদটি শুন্য রয়েছে। এ থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। সেলক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।