নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কে শিমুলিয়া ইউনিয়নের হাটখান গ্রামে কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই মীরা ব্যাটারি হাউজ নামের প্রতিষ্ঠানটি ব্যাটারির কাঁচামাল সিসা উৎপাদনের কারখানা দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ দূষণ করে আসছে। নানাভাবে স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের নিষেধ করলেও কোন ধরনের তোয়াক্কা না করে অবাধে সিসা তৈরি করে যাচ্ছে মীরা ব্যাটারি হাউজ। এ যেন ব্যাটারির কাঁচামাল থেকে সিসা উৎপাদনের একটি কারখানা।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা তানজিল অন্তরা বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টঙ্গীবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা শোয়েব আলী বলেন, আমি এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমি বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য লোক পাঠিয়েছি।
বিগত দেড় বছর ধরে এ কারখানা পরিচালনা করছেন লিটন মাদবর। কিন্তু সরকারি কোনো দপ্তরের অনুমোদন তার কাছে নেই। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কারখানা জুড়ে বসানো হয়েছে সিসার বার তৈরির মেশিন। সেসব মেশিনে উৎপাদিত সিসার বার, কাঁচামাল ও কয়লা কারখানার পুরো শেড জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক কোনো নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই কাজ করছেন বিষাক্ত এ কারখানায়। সংবাদকর্মীরা যেতেই তারা কাজ বন্ধ করে দেন।
কারখানায় সংবাদকর্মী প্রবেশের সংবাদে ছুটে আসেন ম্যানেজার মনির হোসেন। এ বিষয়ে মীরা ব্যাটারি হাউজের ম্যানেজার মনির হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা থানা থেকে ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছি। থানা সব জানে। তার কাছে অন্যান্য দপ্তর সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোন দপ্তর কাগজপত্র দেয় না। খালি জায়গায় আমরা এই প্রতিষ্ঠান করেছি, কোন মানুষের কোন সমস্যা হচ্ছে না। ইন ওয়েন উই নামে ওই চীনা নাগরিক নিজেকে কারখানার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।
এসময় তার সঙ্গে থাকা দোভাষী আল-আমিন জানান, কারখানাটি এখনও চালু করা হয়নি। ট্রায়াল হিসেবে কিছু সিসা উৎপাদন করা হচ্ছে, যা বিভিন্ন ব্যাটারি কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সিসা পোড়ানোয় দূষিত ধোঁয়া আশপাশের পরিবেশের ক্ষতি করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ইটিপি আছে, এখনও চালু করা হয়নি। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে কারখানাটি উৎপাদনে যাবে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন স্থানীয় কবিরাজপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, কারখানাটি পুরোদমে চালানো হয়। এরই মধ্যে কারখানায় সিসা পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ায় কারখানার নারিকেল ও আম গাছের পাতা পুড়ে গেছে। এ কথাটির সত্যতা মিলল গাছের দিকে তাকাতেই।
কারখানার আশেপাশে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজকে বলেন, রাতে সিসা কারখানার ধোঁয়া ছাড়া হয়। এ কারণে এ বছর আম গাছে মুকুল আসেনি, অনেক গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে। ধোঁয়ায় আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শুনেছি, এ ধোঁয়া নাকি বিষাক্ত। আমাদের শরীরে রোগ হবে। কিন্তু প্রশাসন যদি এসব বন্ধ না করে তাহলে আমরা কি করব।
ব্যাটারি কারখানায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার এক শ্রমিক বলেন, পেটের দায়ে কাজ করি। কারখানার কেউ তো কোনোদিন আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জানায়নি। তবে প্রায়ই কারখানার শ্রমিকদের কেউ কেউ মাথা ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ভোগেন।