নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদকে কেন্দ্র করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিগত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখী যাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছিলো মুন্সীগঞ্জের লৌহজং শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে গত সোমবার দুপুর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। এরপরও গত মঙ্গলবার ভোর থেকে হাজার হাজার যাত্রী আসতে থাকে ঘাটে। এতে করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার জোরালো অবস্থান নেয় মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত হয় জেলা পুলিশের ৬ শতাধিক সদস্য। ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ শিমুলিয়া ঘাটে প্রবেশের সকল পয়েন্টে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। তবে এরপরও যারা ঘাটে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলো তাদের মাইকিং করে ঢাকা ফেরত যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে এসময় পরিবহন সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। সবশেষে পুলিশের ব্যবস্থায় ৩৩টি বাসের মাধ্যমে ঘাটে থাকা যাত্রীদের ফেরত পাঠানো হয় ঢাকায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন পদক্ষেপের ফলে ১ দিনের ব্যবধানে জনারণ্য শিমুলিয়া ঘাট এলাকা এখন যাত্রীশূন্য। পুলিশের নজরদারির কারণে গত বুধবার ঘাট এলাকায় নতুন করে দক্ষিণাঞ্চলমুখী কোন যাত্রী ঘাটে আসেনি।
সরেজমিনে গত বুধবার ঘাট এলাকায় দেখা যায়, অল্পসংখ্যক পণ্যবাহী যানবাহন থাকলেও ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় যাত্রী নেই বললেই চলে। প্লাটুনগুলোতেও কোন ফেরি নেই। মাঝ নদীতে ২টি ফেরি নোঙ্গর রয়েছে। নতুন করে কোন ফেরি ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না। টানা ৫ম দিনের মত ঘরমুখী মানুষকে বাড়ি ফেরা থেকে বিরত রাখতে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও শিমুলিয়া ঘাটে প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশি নজরদারি রাখা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার দুপুরে ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল মোমেন। তিনি এসব বিষয়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজকে জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঈদে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ঈদ আসলেই মানুষের বাড়ি ফেরার প্রবণতা কাজ করে। এতে মানুষ কোন কিছুই না মেনে বাড়ি ফিরতে চায়। করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে আহ্বানকে কেন্দ্র করে ইন্সপেক্টর জেনারেল মহোদয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আন্তঃজেলা যোগাযোগের মাধ্যমে করোনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারির মাধ্যমে অপ্রয়োজনে কাউকে ঘাটে আসতে দেওয়া হয়নি। এর আগেই যারা ঘাটে এসেছে তাদের বিষয়ে আইজিপি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছে ঘাট থেকে কেউ যদি ঢাকা ফিরতে চায় পুলিশ যেনো তাদের সহযোগিতা করে। মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ ৩৭টি বাসের মাধ্যমে যাত্রীদের ঢাকা ফিরতে সহযোগিতা করছে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, কাউকে বল প্রয়োগ করা হয়নি। মানবিক পর্যায় থেকে বুঝিয়ে সবাইকে ঢাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। আজ (বুধবার) দুপুরে ঘাট পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘাটে এখন কোন যাত্রী নেই। আশা করছি এ ধারাবাহিকতা আগামী দিনগুলোতেও বজায় থাকবে। আমরা কোনভাবেই এখন কাউকে ফেরিতে পার হতে দেবো না। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। তাই জনগণের প্রতি আহ্বান তারা যেনো ঘরে থাকে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতা করে।