নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা গ্রামের রাস্তাটির বর্তমানে বেহাল দশা বিরাজ করছে। এখানকার রাস্তার একাংশ এখন ভেঙ্গে খালে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাও কোথাও ইটের রাস্তা তৈরি করা হলেও সেখানেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে মালাই খান সাবেক মেম্বারের বাড়ির কাছে সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ নিয়ে ভুতুড়ে কাজ কারবার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কোথাও কোথাও মাটির রাস্তায় বেহাল দশার কারণে এখানকার গ্রামবাসী চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। এ পথ দিয়ে পাঁচটি গ্রামের লোকজন চলাচল করে থাকে বলে জানা গেছে। এই গ্রামগুলোতে বিশিষ্ট লোকজনের জন্মস্থান ও বসবাস হলেও এখানকার রাস্তাঘাট তেমনটা উন্নত হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু কিছু স্থানে কয়েক মাস আগে ইটের রাস্তা তৈরি হলেও বেশিরভাগ রাস্তাই এখনো কাঁচা মাটির রাস্তাই রয়ে গেছে। আবার কোথাও একেবারেই রাস্তা নেই বললেই চলে। সেখানে বাড়ির ওপর দিয়ে গ্রামবাসীদের চলাচল করতে হয়। স্থানীয় নির্বাচন আসলে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন, এবারের নির্বাচনে পাস করলেই সামনের সময়ে এখানে বড় বড় কাজ করে দেয়া হবে। এখানকার ভোটারদের অভিযোগ এটি হচ্ছে কথার কথা। যাতে তার পক্ষে ভোট দেয় যেন সবাই। কথার ফুলঝুড়িতে এখানকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থমকে আছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এখানে একাধিক গ্রাম পূর্ব দিকের অংশ মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই নদীর পূর্বে চাঁদপুরের ষাটনল গ্রাম। এখান থেকে নদী পার হলেই সেই গ্রামে যাওয়া যায়। এছাড়া এ গ্রামের উত্তরে রয়েছে মেঘনা নদীর লিংক। সেই দিক থেকে এটি অনেকটাই দ্বীপের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। জাজিরা গ্রামটি ইতিহাসের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। স্বাধীনতার যুদ্ধে এ গ্রামটি বিশাল অবদান রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে যাওয়ার সময় এখানে ট্রানজিট নিয়ে তবেই এ নদী পার হয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধারা ঐ নদী পার হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়ে সুযোগ বুঝে শহরের আশেপাশে ফিরে গেছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ঢাকার দোহারে যাওয়ার পথে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এ পথটি বেছে নিয়েছিলো বলে এ প্রতিবেদক জানতে পেরেছে। যুদ্ধের সময় এ গ্রামের গাজী বাড়ির মানুষেরা মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাযত্নের কোন কমতি রাখেনি বলে শোনা যায়। আর স্বাধীনতার এতো বছরেও সেই গ্রামটিতে একটুও উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় হতাশার পীড়া বর্তমান প্রজন্মকে তাড়া দেয়। স্বাধীনতার পরে আধারা ইউনিয়নে বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছে নদীর পাড়ের এই এলাকা থেকে। কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া তেমনটা লাগেনি এখানে। এ গ্রামের ঢাকার দক্ষিণের সাবেক যুবলীগের সভাপতি ছিলেন আমির হোসেন গাজী। তিনিও এখানকার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তার স্ত্রী সেই দায়িত্ব পালন করছেন। এতো কিছুর পরেও কেন এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে না। তা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে?
এদিকে বর্ষার চরের দক্ষিণ প্রান্তের পূর্বদিক দিয়ে যাওয়া যায় জাজিরাসহ ৫টি গ্রামে। এছাড়া এ পথ দিয়ে যাওয়া যায় মিনা বাজারে। এ দুটি রাস্তার লিংক রোডে যাওয়ার পথে কাঁচা মাটির রাস্তাটিতে বর্তমানে বেহাল দশা বিরাজ করছে। বর্তমানে কাঁচা রাস্তাটির এমন দশা হয়েছে যে এ পথ দিয়ে কোনভাবেই চলাচল করা যায় না। এর একটু পরের রাস্তাটি আরো দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। সেখানে একটি সেতু ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এর এপ্রোচ সড়কে একটু একটু করে বালি ফেলা হচ্ছে। এ বালি ফেলার ধরণটা অন্য রকমের বলে অনেকেই মনে করছেন। যেমন রাস্তার শেষ অংশের অনেকটাই খালি রেখে সেতুর এপ্রোচ সড়কে বালি ফেলা হচ্ছে। এর ফলে রাস্তার যে অংশটুকু বাকি রয়েছে, সেই অংশটুকু খালি থাকার কারণে এক সময়ের বৃষ্টির পানির তোড়ে খালি জায়গার কারণে বালি সেখান থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এখানকার গ্রামবাসী। এখানকার জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়টি নজর দেয়া প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করছেন। এরপরে রয়েছে ইট বিছানো অনেকটুকু রাস্তা। একমাস আগে তাড়াহুড়া করে এ রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছে। কিন্তু ইট বিছানো রাস্তার নিচে কোন বালি না ফেলার কারণে এখন সেই ইট এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়েছে। এর ফলে এ পথে চলাচলে অসুবিধা দেখা দিয়েছে। এখানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নতুন ইটের রাস্তাতে ড্রেন ও পাইপ থাকার কথা ছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদার ড্রেন ও পাইপ না লাগিয়ে রাস্তায় ইট বিছিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ড্রেন ও পাইপের টাকা কোথায় গেলো তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? এসব অনিয়মের মধ্যে দিয়ে এখানে এর নির্মাণ কাজ চলছে। নদীর পার ধরে এখানে ইটের রাস্তা তৈরি করা হলেও নদীর পাড়ে গাইড দেয়াল না দেয়ায় এখন সেই রাস্তাও ভেঙ্গে যাওয়ার যোগাড় হয়েছে। কোথাও কোথাও গাইড দেয়াল দিলেও যেখানটি দেয়া হয়নি সেখানে বর্তমানে রাস্তা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ইট বিছানো রাস্তার পরের অংশের রাস্তাগুলো বর্তমানে কাঁচা মাটির রাস্তার চেহারা ফুটে উঠেছে ক্যামেরার দৃশ্যে।