শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকবান্ধব – কে এম আজম খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন দেশের গরীব-দুঃখী মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সংগ্রাম চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সংগ্রাম হোঁচট খায়। ১৫ আগস্টের সুবিধাভোগী সামরিক শাসকদের দুঃশাসনে মানুষের মতো বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় শ্রমজীবী মানুষ। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ মুন্সীগঞ্জ জেলা শিল্পাঞ্চল আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে স্থানীয় একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। মুন্সীগঞ্জ জেলা শিল্পাঞ্চল আঞ্চলিক শাখা শ্রমিক লীগ সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এম কায়সার রহমান, মাহবুব আলম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, গোলাম মাওলা তপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মনিরুজ্জামান রিপন, কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, নার্গিস আক্তার, আব্দুর রশীদ, আলাউদ্দীন পাঠান, জাহিদ হাসান, জেসমিন আক্তার, হুমায়রা রিমা প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, মেহনতি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তেমনি তিনি ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর’ জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। স্বাধীনতা লাভের পর জাতির পিতা দীপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক, অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণী রক্তঝরা অনন্য সাধারণ গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আদমজী, টঙ্গী, খালিশপুর, তেজগাঁওসহ শিল্প এলাকা হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের সকল স্থানে শ্রমিকসমাজ বাঙালির সকল মহতী সংগ্রামে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণ যাতে উৎসব হিসেবে মে দিবস পালন করতে পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু সরকার মে দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। মে দিবসে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের এডহক সাহায্য প্রদানের ঘোষণা দেন।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা সংবিধানের ১৪ ও ১৯নং অনুচ্ছেদে মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম সংবিধানে জাতীয় চার নীতির অন্যতম নীতি হিসেবে ‘সমাজতন্ত্র’ যুক্ত করা হয়। যার মর্মার্থ হলো- শোষণবিহীন সমাজ। বঙ্গবন্ধু শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শ্রম অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজান। বঙ্গবন্ধু পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। মজুরি কমিশন গঠন করেন। শিল্প প্রযুক্তির উন্নয়নে উদ্যোগ নেন। ফলে সেসময় হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার সে সংগ্রামÑ শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সে সংগ্রাম হোঁচট খায়। ১৫ই আগস্টের সুবিধাভোগী সামরিক শাসকদের দুঃশাসনে মানুষের মতো বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকে শ্রমজীবী মানুষ বঞ্চিত হয়। ধনী-গরিবের বৈষম্য হয়ে ওঠে পর্বত সমান। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী অব্যাহত শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়।
জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার। জননেত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নামে দুটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়েছে। গার্মেন্ট শিল্প ও তাঁত শিল্পের মানোন্নয়নে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ৫ কোটি মানুষ আজকে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। যে দারিদ্র্যসীমা বিএনপির আমলে প্রায় ৪৭ ভাগের মতো ছিল, আজকে তা ২২ ভাগে নেমে এসেছে। আর এই দারিদ্র্যসীমা থেকে মধ্যবিত্তের স্তরে উঠে আসা জনগোষ্ঠীর বিরাট একটি অংশ হলো এ দেশের শ্রমজীবী মানুষ।