নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, শোষিত-বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দিশারীÑ চিরন্তন জাগরণের নিরন্তন উৎস, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীনতা ও মুক্তির মূর্ত প্রতীক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূণ্যস্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে একটি বেদনাবিধূর শোকের দিন। এই দিন মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের শিকার হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস, চেতনা ধমনীতে প্রবাহিত শুদ্ধতম নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন। ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কালজয়ী নাম। বিশ^ বাঙালির গর্বÑ মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বাঙালি মানসে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির নির্মাতা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী নেতৃত্বেই হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ; মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে উদিত হয় মুক্তির প্রদীপ্ত প্রভাকর।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় ও কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি থেকেছেন। দুইবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি, পরাভব মানেননি।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে নরপিচাশ খুনিরা জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ইতিহাসের ঘৃণিত কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি অতঃপর বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমান চক্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে।
তিনি বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। বাংলা ও বাঙালি যতদিন থাকবে, এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যতদিন থাকবে তিনি একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়েÑ প্রতিটি মুক্তিকামী-শান্তিকামী মানবতাবাদী হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবেÑ পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।