নিজস্ব প্রতিবেদক
যখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১টা ৪৫ মিনিট। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাইজগাঁও গ্রামে সাইপ্রাস থেকে আসা প্রবাসী মাহমুদুর রহমান ওরফে দোলন খান নামে একজনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে গ্রেফতার করে লৌহজং থানা পুলিশ। হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়িতে উঠান। কিছুদূর গিয়ে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে ৫ লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা বললে তাকে থাপ্পর দিয়ে বলে তোর লাইফ শেষ। এ নিয়ে গত কয়দিন যাবত লৌহজং উপজেলার বাসিন্দা প্রবাসী দোলন খানের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিও বার্তায় দোলন বলেন, গত মার্চে সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশে তার নিজ বাড়ি মাইজগাঁও গ্রামে আসেন। আসার ১০ দিন পর রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে লৌহজং থানা পুলিশের এস আই রাজু তার বাড়িতে এসে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গাড়িতে উঠায়। গাড়িতে উঠিয়ে বলে তোর নামে মামলা আছে। ৫ লাখ টাকা দাবী করে বলে এই মামলা শেষ করে দিবো। পরবর্তীতে তিনি ১ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তখন এস আই রাজু বলেন, একলাখে কিছুই হবেনা। তোর লাইফ শেষ। এরপর পুলিশের মানসিক টর্চারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা করান। পরদিন সকালে ২৩ মার্চ তাকে মুন্সীগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করে। হাজতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সে হাজত মেডিকেল বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ জেলখানা থেকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করে। তারপর কারাগার থেকে গত ৯ এপ্রিল ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন জাল ওয়ারেন্টে বিনা অপরাধে ১৮ দিন হাজত বাস করেছেন।
দোলন খান আরও জানান, লৌহজং থানা থেকে জাল ওয়ারেন্টে বিনা অপরাধে ১৮ দিন হাজত খেটেছেন। তিনি জানান, তার মত আর কোন ব্যক্তিকে যেন বিনা দোষে হাজত খাটতে না হয়। পুলিশের মিথ্যা ওয়ারেন্টে হাজত বাস করার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচারের দাবী জানান।
মামলা ও হাজিরা সূত্রে জানা যায়, মোকাম বিজ্ঞ সি.এম.এম সাহেবের আদালত, ঢাকা। সূত্র: গুলশান থানার মামলা নং-০৩ (০৯) ২০১৫। ধারা: ২০১২ সনের মানবপাচার প্রতিরোধ আইন ১০ (২)/৮, সি.আর নং-২৩২/২০১৫। বিষয়: জাল ওয়ারেন্টে গ্রেফতারকৃত হাজতী আসামী মাহমুদুর রহমান ওরফে দোলন খান। যেহেতু দরখাস্তকারী আসামীর পক্ষে বিজ্ঞ নিয়োজিত আইনজীবী গ্রেফতারকৃত আসামীর মামলায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওয়ারেন্টের উল্লেখিত গুলশান থানার মামলা নং-০৩(৯)২০১৫, ধারা-২০১২ মানবপাচার আইনে ১০(২)/৮ এই নম্বরে কোন মামলা নাই। কিন্তু গুলশান থানার মামলা নং- ০৩(৯)২০১৫ দ: বি: আইনে দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক মামলার ধারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, আদালতের লোকজনের যোগসাজশে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে উক্ত ওয়ারেন্টটি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে দোলনের আইনজীবি মজিবুর রহমান জানান, আমরা যাচাই করে দেখেছি স্মারকপত্রে উল্লেখিত আসামি মাহমুদুর রহমান ওরফে দোলন খান গুলশান থানার মানবপাচার মামলার কোনো আসামি নয়। বর্ণিত স্মারকে উল্লেখিত গ্রেফতারী পরোয়ানা ওয়ারেন্ট জাল হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আসামী দোলনকে বেকসুর খালাস দেন।
তিনি আরো জানান, একটি চক্র প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে আদালত থেকে এ ধরনের ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরি করে ডাকযোগে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। এরপর ঐ গ্রেফতারি পরোয়ানা যাচাই-বাছাই না করেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট থানায়। থানার কাছে ঐ গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছার পর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করতে যায়। ঐ আসামি মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যাপারে আগাম কোন তথ্য জানেন না। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয় লৌহজং থানার এসআই রাজু জানান, দোলনকে ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীর কাছ থেকে টাকা চাওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে লৌহজং থানা ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামীকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই মামলার বিষয়ে সংশিষ্ট থানা ও বিজ্ঞ আদালত বলতে পারবে।