নিজস্ব প্রতিবেদক : তিন লক্ষ জনসংখ্যার বসবাস মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায়। উপজেলাটির অন্যতম সমস্যা যানজট। উপজেলা সদরের টঙ্গীবাড়ী বাজার চৌরাস্তায় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় যানজট। উপজেলার ব্যস্ততম সড়কটিতে যানজটের কারণে সমস্যায় পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, উপজেলার হাসপাতালে আসা রোগী, রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতরত যাত্রী, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা, উপজেলায় বিভিন্ন সেবা নিতে আসা জনসাধারণকে। বছরের পর বছর ধরে সমস্যার সম্মুখীনদের আশা পূরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সর্বস্তরের জনগণ ও প্রশাসনের সহযোগিতায়।
গত শনিবার উপজেলা প্রশাসন, বাজার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের জনগণ বাজারে যানজট নিরসনে কাজ করার জন্য নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, রবিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোন ট্রাক বাজারের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। উপজেলার সকল হিমাগার কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হবে। উপজেলা বাস মালিক সমিতির নেতা নূর হোসেন সরদারকে জানানো হয়, বাস টঙ্গীবাড়ী বাজারে যেন না ঢুকানো হয়।
বক্তারা আরো জানান, অটোরিক্সা বাজার থেকে বাহিরে রাখতে হবে। ৩টি পয়েন্ট করে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা। গোয়ালবাড়ী ব্রিজ সংস্কার, নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ড করা এবং সেখানে বাস রাখা।
ক্রেতাদের পক্ষে জানানো হয়, বাজারে অটো ঢুকতে না পারলে ক্রেতা মালামাল কিভাবে নিবেন? বৃদ্ধ ও নারীদের সমস্যা আরো বেশি।
ছোট পিকআপ ফলপট্টিতে নির্ধারিত স্থানে রেখে মালামাল পৌঁছে দিবেন। অটোরিকশা চালকেরা পেশাদারি আচরণ করেন না। এডহক কমিটি করে দায়িত্ব নেয়া। বাজার ব্যবসায়ীরা পাহারাদারদের নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা দেন সেখান থেকে লাইনম্যানদের বেতন দিতে হবে। ৫ তারিখের পর টালমাটাল অবস্থা, ঠিকমত পাহারাদারি চাঁদা দিতে গড়িমসি করে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি রিপন মল্লিক জানান, থানা সদর টঙ্গীবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে যানজট নিরসন করতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষের মূল সমস্যা এখন যানজট। গাড়ি রাখার ৩টি স্থান নির্ধারিত করে সমাধান করা যায়। স্বামী বিদেশে, বাজারের লোক নেই জানিয়ে মহিলারা বাজার করেন। তাদের বাজারে গাড়ি ছাড়া চলা কষ্টকর। তাই গোয়ালবাড়ী ব্রিজটি দ্রুত করতে হবে। বাজারে পাহারাদার বাড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আনসারদের মূল্যায়ন কম করে গাড়ি চালকেরা। তাই কয়েকজন পুলিশ দিলে ভালো হবে।
অফিসার ইনচার্জ জানান, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গাড়ি চালকদের নিয়েও মিটিং করতে হবে। আর বাজার কমিটি বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়েই করতে হবে। নাহলে বাহিরের লোক প্রবেশ করে খরচের নামে চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করা হবে। বাজার ব্যবসায়ীদের আগে ঠিক হতে হবে। সবাই দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করে। ক্যামেরা বসাতে হবে সকল ব্যবসায়ীদের দোকানে। থানায় ৩০ জন পুলিশ শর্ট। ব্যবসায়ীরা ১টা গাড়ি কিনে দিয়েছেন।
ইউএনও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ব্যবসায়ীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। দ্রুত গোয়ালবাড়ী ব্রিজ নির্মাণকরণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা হবে। টঙ্গীবাড়ী মৌজার দাগ নং-৭১ এ ৬ শতাংশ খাস, আর দাগ নং-৭২ এ ৪৯ শতাংশ রোডসের জমি রয়েছে সেখানে বাসস্ট্যান্ড করতে হবে। গোয়ালবাড়ী ব্রিজের পাশে খাস জমি আছে। সেখানে অটোরিক্সা স্ট্যান্ড করা যায়। আরেকটা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন জমিতে স্ট্যান্ড করলে সমাধান সম্ভব। আমরা টঙ্গীবাড়ীতে অন্তত ২ জন ট্রাফিক পুলিশ প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা করবো। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সহায়তা করে লোক নিয়োগ দিবেন। তবে দ্রুত বাজারের এডহক কমিটি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ী ও অটোরিকশা চালকদের জন্য সুবিধা হয় বাজারে গাড়ি আসলে, আর তাতেই যানজট শুরু হয়। ২টি বাইপাস রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। শরিফ কোল্ড ষ্টোরেজ ও মাঝি বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন মারিয়ালয় খালে ব্রিজ নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের গাড়ি আর বাজারে ঢুকতে হবে না। আরেকটি বাইপাস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শুরু করে রংমেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত কাজ শেষের দিকে। উপজেলা পরিষদের পূর্বপাশের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের দোকানগুলো সরিয়ে কাজী মার্কেটের পূর্বপাশে পুকুরের ভরাট স্থানে স্থানান্তরিত করতে হবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন টঙ্গীবাড়ী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সুমন চোকদার, ব্যবসায়ী আব্দুল হাই, আব্দুল মান্নান, দুলাল হাজী, মোঃ ফারুক মাঝি, মারুফ ইসলাম সেন্টু, আক্তার হোসেন স্বপনসহ ছাত্র প্রতিনিধিগণ।