মানছে না সামাজিক দূরত্ব
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাই, ভালো মাছ আছে। পদ্মা নদীর টাটকা মাছ, নিয়া যান জিতবেন। বিক্রেতাদের এমন হাঁকডাকে ক্রেতারা কাছে এসে দরদাম করছেন। এদিকে, মাছবাজারের পাশেই সবজিবাজার। সেখানেও একই দৃশ্য। শত মানুষ জটলা বেঁধে মাছ, সবজি কিনছেন। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা বরং ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে যেন জমজমাট চারপাশ। এ চিত্র গতকাল শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারের। শহর ফাঁকা হলেও গ্রাম পর্যায়ে সামাজিক দূরত্ব মোটেও তৈরি করা যাচ্ছেনা। সাপ্তাহিক হাটের দিন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল এসব বাজারে ভিড় করছে মানুষ। গোপনে ও প্রকাশ্যে চলছে বিভিন্ন দোকানে আড্ডাবাজীর সমাগম। এর ফলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার জেলার বৃহত্তম এ হাট-বাজার দিঘীরপাড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, শতাধিক মাছ ও সবজি ব্যবসায়ী বসে আছেন পণ্য নিয়ে। মরিচের আড়ৎ, পেঁয়াজের আড়ৎ, মুদি, ফল ও ওষুধসহ অন্যান্য প্রায় তিন শতাধিক দোকানপাট খোলা রয়েছে। প্রতিটি দোকান ঘিরে মানুষের ভিড়। কোথাও কম, কোথাও বেশি ক্রেতা। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। কিন্তু এই বাজারে তার কোনো বালাই নেই। একে অপরের সঙ্গে শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছিলেন ক্রেতারা। কোনো কোনো ক্রেতাকে অবশ্য নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। তবে অধিকাংশই মানছেন না করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশনাসমূহ। সর্বত্র মানুষের জটলা বেঁধে রয়েছে। সাধারণ মানুষ তোয়াক্কাই করতে চাচ্ছেনা করোনাকে। আর এ গাফিলতি থেকেই ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়। দিঘীরপাড় বাজারে সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার এই দুইদিন হাট বসে। এই হাটে পার্শ্ববর্তী জেলা শরিয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী কাঁচামাল ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসেন। ফলে বাজারে সমাগম ঘটে হাজার হাজার মানুষের। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, ইজিবাইক, সিএনজি ও কাঁচামালের ট্রাক চলছে স্বাভাবিকভাবেই। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালালেও জনগন সেটা সঠিকভাবে মেনে চলছে না। ফলে দিন দিন বাড়ছে ঝুঁকি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে করোনা বিস্তার রোধে। প্রায় সময় দিঘীরপাড় বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হলে মানুষের উপস্থিতি কিছু সময়ের জন্য রোধ করা গেলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার সাথে সাথে আগের চিত্রে ফিরে আসে বাজারে। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের দাবি, বাজারগুলোতে প্রয়োজন স্থায়ীভাবে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা আরো জোরালো করার পাশাপাশি স্থানীয় খোলা মাঠে কাঁচাবাজার স্থানান্তর করলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে মাছ ও সবজির বাজার শুরু হয়। তবে হাটের দিন সকাল থেকে মরিচের আড়তসহ বিভিন্ন আড়ৎ একে একে খোলা হয়। এছাড়া বেলা ১১টা পর্যন্ত বাজারের সকল দোকান খোলার অনুমিত থাকায় এ সময়টিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় হয়। শিলই এলাকা থেকে বাজার করতে আসা সৌরভ মাহমুদ জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার মানুষজনদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন। এটি মেনে আমি এতদিন বাসার বাইরে বের হইনি। আজ বেরিয়েছি। আসার পথে রাস্তাঘাট ফাঁকা পেয়েছি। হাঁটতে হাঁটতেই বাজারে এসেছি। আগের মতোই দেখি বাজারে ভিড়ভাট্টা। তাহলে মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন কই? ভয় নিয়ে প্রয়োজনীয় সবজি ও মাছ কিনে নিচ্ছি। কার সঙ্গে কখন শরীর লেগে যায়, সেই আতঙ্কে আছি। এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ী থানা ওসি শাহ্ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, গত একমাস যাবত আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং বাজারে আগত মানুষদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্ত সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে হাট-বাজারে জনসমাগম সৃষ্টি করছে। তবে, ভালো সংবাদ হচ্ছে বিকাল দিকে মানুষের উপস্থিতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানান, দিঘীরপাড় বাজারের মাছের আড়তগুলোকে দূরত্ব বজায় রেখে বসানো হয়েছে। এছাড়া মরিচের হাটগুলোর বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা সঠিকভাবে মানছেন না আড়তগুলো। আমাদের অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলো টেকসই হচ্ছে না, তাই বাজারের সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে খুব শিগগিরই। এদিকে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় মৃত দুইজনসহ এ পর্যন্ত ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মৃত ছয়জনসহ ৫৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাই দ্রুত জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।