ক্রীড়া প্রতিবেদক
তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ঐ একটি ম্যাচ খেলেই ২০১৫ ‘র বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যাওয়া। বিশ্বকাপে আফগানিস্তান (২৫ বলে ২৮), শ্রীলঙ্কা (১৫ বলে ২০), স্কটল্যান্ড (২), ইংল্যান্ড (৫২ বল খেলে ৪০), নিউজিল্যান্ড (৫১, ৫৮ বলে) আর ভারতের (৪৩ বলে ২৯) বিপক্ষে ৬ ম্যাচেই সৌম্য নিজেকে চিনিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, হোক তা ফাস্টবোলার কিংবা স্পিনার, নিজের আয়ত্ত্বের মধ্যে বল পেলে যে কোন বোলারকে মুহূর্তে বাতাসে উড়িয়ে সীমানার ওপারে পাঠানোর ক্ষমতাটা আছে বেশ।
বিশ্বকাপের পর দেশে ফিরে আরও দুর্বার সৌম্য। প্রথমে ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ১২৭ রানের (১১০ বলে ১৩ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কা) ঝড়ো শতকে পাকিস্তানিদের লন্ডভন্ড করে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে শিরোনামে। তারপর ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের (৪০ বলে ৫৪, ৪৭ বলে ৩৪ আর ৩৪ বলে ৪০) সিরিজেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
ঠিক পরের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবার তিন ম্যাচের সিরিজে দারুণভাবে জ্বলে ওঠে সৌম্যর ব্যাট। তিন ম্যাচে একজোড়া ‘বিগ ফিফটি (৮৮* ও ৯০) হাঁকিয়ে দুই খেলায় পরপর ম্যাচ সেরা পারফরমারের পুরস্কার জিতে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওমন উদ্ভাসিত, উড়ন্ত সূচনার পর হঠাৎ কেমন যেন আলো কমে যায়। ফিঁকে হয়ে যায় সৌম্যর নৈপুণ্যের দ্যুতি।
২০১৫ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ বলে ৯০ রানের অসাধারন ইনিংস খেলার পর কোথায় যেন হারিয়ে যান সৌম্য। তারপর ১৮ ম্যাচে আর কোন ফিফটির দেখা মেলেনি। এর মধ্যে একটি ম্যাচ অবশ্য বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেছে। বাকি ১৭ ইনিংসে সৌম্য আটবার আউট হয়েছেন দশের কম রানে। এই যে পারফরমেন্সে জোয়ার-ভাটা, বিশেষ করে এমন চকমকে আর জ্বলজ্বলে শুরুর পর। সেখান থেকে উঠে আসা সহজ ছিল না। সৌম্য কিভাবে পারলেন?
কাল শনিবার নিজের ফেসবুক লাইভে তা জানতে চাইলেন সঞ্চালক তামিম ইকবাল। তামিম সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিশ্বকাপে খুব ভালো খেলেছিস। তারপরও বেশ কিছু দারুণ ইনিংস বেরিয়ে এসেছে তোর ব্যাট থেকে। সবাই প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এর বিপরীত দৃশ্যও চোখে পড়েছে। তোকে মুদ্রার অপর পিঠও দেখতে হয়েছে। ফর্ম ছিল না। অনেক সমালোচনা ও তীর্যক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে। ঐ সময়টা কেমন ছিল? এ যাত্রা পথ কতটা কঠিন ছিল?’
সৌম্য জবাব দিতে গিয়ে বারবার তামিম ইকবালেরই প্রশংসা করেছেন। আর তার সু-পরামর্শের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তামিমের প্রশ্নর জবাবে অনেক কথার ভীড়ে সৌম্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। যাতে ছিল অদ্ভুত সারল্য। অকপটে স্বীকার করেছেন, শুরুর দিকে তামিমই ছিলেন তার আদর্শ। তার মত খেলতেও চাইতেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি পুরো জানা ছিল না। যা পরে তামিমই শিখিয়েছেন।
তামিম তাকে বুঝিয়েছেন, কিভাবে ইনিংস শুরু করতে হয়। একটি বাউন্ডারির পর আবেগতাড়িত না হয়ে কিভাবে দেখে খেলতে হয়। আর সবচেয়ে বড় পরামর্শও দিয়েছিলেন তামিমই। বুঝিয়েছিলেন, দীর্ঘ ইনিংস খেলার বিকল্প নেই। ৩০-৪০ রান কেউ মনে রাখে না।
সৌম্য বলেন, ‘আমার মনের মতোই খেলতাম। সারাজীবন দেখে এসেছি তামিম ভাই অনেক মেরে খেলেন। স্ট্রাইকরেট অনেক হাই থাকে। আমার চেষ্টা ছিল ঐরকম কিছু করার। আমি দুটি বল ডট দিলে সমস্যা নেই। তামিম ভাই তো আছেন। যখন দেখলাম আমার কোন শট দেখে তামিম ভাই এসে বলতেন, একটা বল দেখ। চার মারছিস। একটা বল দেখ। তখন আমি বুঝতাম যে না খেলার শুরুটা আসলে কিভাবে করতে হবে।’
সৌম্য যোগ করেন, ‘তারপর এসে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সময়টা ভালোই কেটেছিল। তারপর আমাদের ওয়ানডে খেলা কম হলো। টি-টোয়েন্টি ম্যাচই বেশি হলো। তখন টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে মিলে কোনোটায়ই ভালো করিনি। ঐ সময়টাই খারাপ কেটেছে।’ সেই খারাপ সময়েই হয়েছে আসল উপলব্ধি। একটা অনুভব জাগ্রত হয়েছে। সৌম্যর ভাষায়, ‘শুরুতে ভালো তো সবাই বলে। ৩০-৪০ করে আউট হয়ে গেছি। সেটা তখন খুব বড় কিছু মনে হতো না।’
তামিমকে ইঙ্গিত করে সৌম্য বলে ওঠেন, ‘তখন আপনার কথা মনে পড়তো। আপনি বলতেন ৩০-৪০ করে আউট হয়ে গেছিস। ৭০-৮০ গুলো যদি ১০০ + করতে পারতাম, ৩০-৪০ গুলো যদি পঞ্চাশ হতো, তাহলে দেখতেও ভালো লাগতো। ’
সৌম্যর কথার শেষ তুলির আঁচড় বুলিয়ে দেন তামিম, ‘ঠিক উপলব্ধি করেছিস। আসলে ৩০-৪০ যত সুন্দর আর আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, মানুষ ভুলে যায়। ৫০ ক্যারিয়ারের সাথে যোগ হয়। সবাই মনে রাখে।’