ফিচার ডেস্ক
আমাদেরকে শেখানো হয়েছে যে দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ করা উচিত। দিনে দুইবার ব্রাশ করলে মুখ গহ্বরের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি বিভিন্ন অসুস্থতার ঝুঁকিও হ্রাস করে। দাঁতের সঠিক পরিচর্যা বা ঠিকভাবে ব্রাশ না করলে আপনার স্বাস্থ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, দাঁতের গোড়ায় এমন পদার্থ থাকে যা প্রতিরক্ষার কাজ করে এবং শরীরে কোনো সংক্রামক কিছুর প্রবেশ ঘটাতে বাধা দেয়। এজন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনার দাঁতের সঠিক যত্ন নেয়া উচিত। এজন্য আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং সঠিকভাবে ব্রাশ করতে হবে।
ডেন্টাল প্ল্যাক বা দন্তমল কী?
সহজভাবে বলতে গেলে ২৪ ঘণ্টায় একবারও দাঁত ব্রাশ না করে নখ দিয়ে দাঁতের ওপর আঁচড় দিলে যে সাদা পদার্থ দেখা যায়, সেটাই প্ল্যাক। দাঁতের গর্ত বা মাড়িরোগের প্রধান কারণ এই ডেন্টাল প্ল্যাক। নিঃসৃত লালার বিশেষ এক উপাদান দাঁতের পৃষ্ঠে আঁঠালোভাবে লাগতে শুরু করে আর অল্প সময়ে এর মধ্যে মুখের জীবাণু বাসা বাঁধে। প্রথম দিনে তিন থেকে সাত ঘণ্টায় জীবাণুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
যে কারণে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্ল্যাককে সঠিক নিয়মে ব্রাশের মাধ্যমে পরিষ্কার না করলে পরে সহজে আর পরিষ্কার করা যায় না। তখন থেকেই শুরু হয় নানা রোগ। এ কারণে পরিপূর্ণ প্ল্যাক ও পরে সেটা পাথরে রূপ নিলে চিকিৎসক দ্বারা স্কেলিং করিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া খুব জরুরি। সুস্থ থাকতে হলে সঠিক নিয়ম জেনে প্রতিদিন মুখ পরিষ্কারের মাধ্যমে এসব জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো বিকল্প নেই।
নিয়মিত ব্রাশ না করলে কী হয়?
যুক্তরাজ্যের দন্ত চিকিৎসক ডা. কেন হ্যারিস, ডা. সমীর প্যাটেল এবং ডা. অ্যাডম থর্ন সম্প্রতি ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করার ফলে মুখে দুর্গন্ধ, করোনারি হৃদরোগ, মাড়ি থেকে রক্তপাত, দুর্বল দাঁত, দাঁতে দাগ পড়াসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যের প্রতিও প্রভাব পড়ে।
ঝুঁকির মধ্যে কে?
দাঁত ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকিতে কেবল প্রাপ্ত বয়স্করাই নয়, কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছানোর আগেই ৪০ শতাংশ শিশুর দাঁত ক্ষয় হয়, যা পরবর্তী জীবনে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে ফেলে।
আপনার ইমিউন সিস্টেমটি সুস্থ রাখতে, দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা ভাল। এই অভ্যাসটি আপনাকে কেবল ঝলকানি হাসিই দেবে না, মুখ থেকে জীবাণুও দূরে রাখবে। দাঁত ব্রাশ করার জন্য পরিষ্কার পানি ব্যবহার করুন। কারণ নোংরা পানি দিয়ে ব্রাশ করলে উপকারের বদলে অপকার হতে পারে।
শিশুদের দাঁতের যত্ন
শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত কেবল মায়ের বুকের দুধই একমাত্র আদর্শ খাদ্য, এটা সবাই জানেন। অনেক মা শিশুকে ফিডারে কৌটার দুধ, কখনো স্বাদ বাড়ানোর জন্য চিনি মিশিয়ে দিয়ে থাকেন। এটা শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য তো খারাপই, দাঁতের জন্যও খারাপ। এতে নতুন দুধদাঁতেও ক্যারিজ বা ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া মায়ের বুকের দুধে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শিশুর মজবুত দাঁত গড়তে সহায়ক। কৌটার দুধে তা নেই। দাঁত না থাকলেও নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা উচিত। তাই রাতে বুকের দুধ খাওয়ানো শেষ হলে পাতলা ফ্লানেলের কাপড় অথবা তুলা দিয়ে দাঁতের ওপর থেকে দুধের আবরণ পরিষ্কার করে দিন।
শিশুকাল থেকেই দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মা সকালে ও রাতে শিশুর সামনেই দাঁত ব্রাশ করবেন। শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয়। তাই শিশুর হাতে দাঁত ওঠার শুরুতেই একটা ব্রাশ দেওয়া ভালো। একটু বড় হলে শিশুকে হাতে ধরিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করার শিক্ষা দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখুন শিশুদের টুথ ব্রাশটি যেন নরম শলাকার তৈরি হয়। শিশুদের উপযোগী ব্রাশ ও টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়। এমন টুথপেস্ট যা গিলে ফেললেও সমস্যা নেই। বাড়ন্ত শিশুর দাঁতের ক্ষয় রোধে ফ্লোরাইড কার্যকরী, তাই এই টুথপেস্ট ফ্লোরাইড মিশ্রিত হলে ভালো। আর অবশ্যই ব্রাশ করার পর তাকে কুলি করার জন্য গ্লাসে বা মগে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা খাবার পানি দিন, কলের পানি নয়।
শিশুর দুধদাঁত কখনো কখনো ১১ বছর বয়স পর্যন্ত মুখে অবস্থান করে। অনেকের ধারণা এই দাঁত তো পড়ে যাবে, তাই এর যত্নের দরকার নেই। কিন্তু তা যদি সুস্থ ও সুরক্ষিত না থাকে পরবর্তী স্থায়ী দাঁতগুলোতেও সমস্যা হতে পারে। দুধদাঁতের শিকড়ে প্রদাহ অনেক দিন স্থায়ী থাকলে স্থায়ী দাঁতের ক্ষতি হয়। দুধদাঁত পড়া ও স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়ে শিশুর দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। নয়তো স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা বা অসমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে।