নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রশাসনের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকরা সিন্ডিকেট করে দীর্ঘদিনের পুরনো ফিটনেসবিহীন লঞ্চগুলো দিয়েই মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে যাত্রী পারাপার করছে। মুন্সীগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, রাজধানী ঢাকার কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জ। এই জেলার জনগণের ভাগ্য স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। নৌপথে নারায়ণগঞ্জ হয়ে অথবা মীরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে করে সরাসরি ঢাকা যেতে পছন্দ করেন তারা। কিন্তু এই দুই নৌপথও এখন সিন্ডিকেটের দখলে। পুরনো ফিটনেসবিহীন লঞ্চগুলো দিয়েই এই পথে যাত্রী পারাপার করছে একটি সিন্ডিকেট। এদিকে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার দুই পাশে নদী দখল করে গড়ে উঠেছে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। নদী দখল করে শত শত পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করে রাখা হয়েছে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে। এ কারণে নদীপথ সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও অদক্ষ চালক, সিগন্যাল বাতি সম্পর্কে সঠিক ধারনা নেই বলে দূর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের ইজারাদার দীল মোহাম্মদ কোম্পানি বলেন, মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে ২৩টি লঞ্চ ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে। মাত্র দুটি লঞ্চ ৬০ ফুটের ওপরে। এই লঞ্চগুলো দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। লঞ্চের আকার ছোট হওয়ায় প্রায়ই নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে এই নৌরুটে।
দীল মোহাম্মদ আরো বলেন, লঞ্চগুলোর আকার বড় করার জন্য বিআইডব্লিউটিএকে বারবার বলা হচ্ছে। তারপরও তারা বড় লঞ্চের অনুমোদন দিচ্ছে না। সেই সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথের ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যার মোহনায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো তাদের জাহাজগুলো যত্রতত্র অবস্থায় রেখেছে। যার ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চগুলো চলাচল করছে। যেকোনো সময় আবারও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগে, গত বছরের ২৯ জুন সকালে এম এল মর্নিং বার্ড নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে মুন্সীগঞ্জের ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার পর গত বছর ৩০ জুন সদরঘাট নৌ-পুলিশের এসআই শামসুল আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ মামলার এজাহারে দায়িত্বে অবহেলা ও বেপরোয়াভাবে মর্নিং বার্ড লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দিয়ে প্রাণহানির জন্য ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৩৩৭ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এক বছরের মধ্যে বড় দুটি নৌ-দুর্ঘটনা মুন্সীগঞ্জের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ^াস দেন ডিসি। তিনি বলেন, লঞ্চগুলোর আকৃতি বড় করতে বিআইডব্লিউটিএকে বলা হয়েছে। এছাড়া যারা নদীর মধ্যে যত্রতত্র জাহাজ রেখে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ‘সাবিত আল হাসান’ নামে যাত্রীবাহী লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এলাকায় এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. মৃণাল কান্তি দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার যে নৌপথটি রয়েছে সেখানে সিমেন্ট কারখানার শত শত জাহাজগুলো নদীতে এলোমেলোভাবে বারথিং (নোঙ্গর) করে রাখে। যার ফলে এ নৌরুটে চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বহুবার আমি বলেছি, কিন্তু কে শুনে কার কথা। এই নৌপথে মানুষের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মিছিল রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছি।