নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে ভাড়ার টাকা না দেওয়ায় চলন্ত লঞ্চ থেকে চার শিশুকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠে একটি লঞ্চের বিরুদ্ধে। সেদিন নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় দুই শিশুকে উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দুই শিশুর বক্তব্য এবং পুলিশের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়। মঙ্গলবার লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয় বলে মেহেদুল এবং অপর দুই শিশু সিয়াম ও তরিকুল নিজেরাই বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। মূলত চার শিশুর মধ্যে শাকিব অপর আরেক শিশুকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পর বাকি তিনজন নিজেরাই নদীতে লাফিয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ শাকিব ও মেহেদুলকে উদ্ধার করে। তবে পুলিশের কাছে বিষয়টি লুকাতে শাকিব ও মেহেদুল মিথ্যা অভিযোগ করে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিয়াম বলছেন, সদরঘাট থেকে তারা লঞ্চে উঠেছিল। সেখান থেকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের কাছে পৌঁছে মাঝনদীতে যাত্রী উঠানামা করা ট্রলারে তাদের পাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তারা ট্রলারে নামতে গেলে চালকরা নামতে দেয়নি। পরে চাঁদপুর অভিমুখে চলতে থাকা লঞ্চ থেকে সঙ্গীদের নদীতে লাফ দিতে বলে শাকিব। তবে কেউ লাফ না দিলে শাকিব তাদের মধ্যে থাকা তরিকুলকে নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর একে একে নদীতে ঝাঁপ দেয় অপর তিনজন। পরবর্তীতে সিয়াম ও তরিকুল সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভাসতে থাকে মেহেদুল ও শাকিব। গজারিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া শিশু মেহেদুল জানায়, পুলিশকে দেখে শাকিব লঞ্চের স্টাফরা নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে পুলিশের কাছে বলতে শিখিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করলে শাকিব নিজেই পুলিশের কাছে বলে তাদের লঞ্চের স্টাফরা ফেলে দিয়েছে। ভিডিওতে শিশুরা আরও জানায়, লঞ্চের স্টাফ ও পুলিশ কেউ তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। এর আগে গত শনিবার ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় শাকিব ও মেহেদুলকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তারা দাবি করে, পানি বিক্রির জন্য রাজধানীর সদরঘাট থেকে ‘ইমাম হাসান-৫’ নামের একটি লঞ্চে উঠেছিল। ভাড়া না দেওয়ায় তাদের মেঘনা নদীতে ফেলে দেন লঞ্চের স্টাফরা। তবে লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন লঞ্চের মাস্টার দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, পানি ও রুটি বিক্রি করা বাচ্চাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয় না। ওরা টোকাই, ওদের কাছ থেকে ভাড়া চাওয়াই হয় না। ভাড়ার জন্য নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য না। এদিকে নদী থেকে শিশুদের উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় গত রোববার ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এ বিষয়ে নৌপুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, এটা আমলযোগ্য অপরাধ। মানুষকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। অভিযোগটি গুরুতর ছিল তাই মামলা নেওয়া হয়েছে। যদি তদন্তে বেরিয়ে আসে তারা (শিশুরা) মিথ্যা বলেছে তাহলে সেই রিপোর্ট দেওয়া হবে। যদি সত্য বলে থাকে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।