নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি নদীবেষ্টিত মুন্সীগঞ্জ জেলায় রয়েছে আঁকাবাঁকা ছোট বড় অনেক খাল এবং বিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আড়িয়ল বিল। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পাশাপাশি পুরো জেলায় সরকারি, বেসরকারী এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জেলেরা সারা বছরই নদীতে মাছ পাচ্ছে। জেলায় রয়েছে একাধিক মাছের আড়ৎ। সেই আড়ৎগুলো থেকে মাছ কিনে নিয়ে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের হাট বাজারে বিক্রি করছে ছোট বড় পাইকাররা। জেলার উচ্চ, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষেদের পরিবারের পছন্দ তালিকায় থাকে নদীর মাছ। নদীর তাজা মাছের চাহিদা বেশী এবং দাম বৃদ্ধি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ পুকুরের চাষকৃত পাংগাস, তেলাপিয়া, রুই, কাতলসহ অন্যান্য মাছ কিনে তাদের চাহিদা মেটায়। পাইকারী কিংবা খুচরা বাজারে পুকুরে চাষ করা মাছের চেয়ে নদীর মাছ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। বাজারগুলোতে নদীর মাছের দাম বৃদ্ধি থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ পুকুরে চাষ করা মাছ কিনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় নদী, পুকুর, খাল, বিল, হাওর থেকে বছরে ৩২,৫৫০ মে.টন মাছ উৎপাদন হয়। বছরে জেলায় মাছের চাহিদা থাকে ৩২,৮৫০ মে.টন। ঘাটতি থাকে ৩০০ মে.টন। এই ৩শ মেট্রিক টনের চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ। স্থানীয় জেলেরা বলছে, জেলায় মাছ চাষ বেড়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় পদ্মা তীরের মাওয়া ঘাট, লৌহজং বাজারের হাট, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল এবং দিঘীরপাড় বাজারের পাইকারী আড়ৎ। এছাড়াও সদর উপজেলার বাংলাবাজার এবং মিরকাদিমের পাইকারী মাছ বাজার তো আছেই। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট হাট বাজারগুলোতে পাইকরী এবং খুচরা বিক্রি হয় নদী এবং পুকুরের মাছ। জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা নদী থেকেই পাইকার, ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে বারবার হাত বদল করে মাছ চলে আসে বাজারে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণে প্রয়োজনে বেশী দামে মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। বাজারে গিয়ে বিত্তবানরা চড়া দাম দিয়ে কিনছে মাছ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষ দর কষাকষির কোন সুযোগ মেলে না। বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকার চাষের মাছ কিনে নিতে হয়। ক্রেতা আল আমিন জানান, বাজারে আসলে সবসময় বেশী দামে মাছ কিনতে হয়। বাজারে আসা বিত্তবানরা বেশী দাম দিয়েই কিনে নেয়। আবার পাইকারী ডাক উঠলে সেখানেও বিত্তবানরা খুচরা বিক্রিতাদের থেকে বেশী দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছে মাছ। আমাদের মত মধ্য আর নিম্ন আয়ের লোকজনদের দর কষাকষির কোন সুযোগ থাকে না। চাষের মাছ কিনেই মিটাতে হয় মনের চাহিদা। মাছ বিক্রেতারা আরো জানান, নদীর মাছের আমদানি বেশী হলে দাম কিছুটা কমে। নদীর মাছ জেলেরা ঢাকা নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করে বেশী। আমরা মিরকাদিমের পাইকারী বাজার এবং রাজধানী ঢাকার যাত্রীবাড়ী আড়ৎ থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। পরিবহন খরচের কারণে একটু বেশী দামে বিক্রি করতে হয়। এছাড়া নদীর গুঁড়ো মাছ এবং পুকুরে চাষকৃত মাছের দাম কমই আছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, নদীতে কষ্ট করে মাছ ধরার পর জেলেরা কম দামেই বিক্রি করে। জেলেদের থেকে স্থানীয় ফরিয়া, দালাল এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হাত বদল হয়েই মাছ আসে বাজারে। এ কারণে মাছের দাম বেশী হয়। জেলেরা যদি সরাসরি পাইকারী হাটে মাছ এনে বিক্রি করত তাহলে জেলে এবং সাধারন ক্রেতা উভয়েই লাভবান হতো। জেলায় মাছের চাহিদার কোন ঘাটতি নেই।