নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, ৩রা নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক ঘৃণ্য ও কলঙ্কিত দিন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় প্রবাহিত করে দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে বিপথে নিতেই কাপুরুষোচিত এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
গতকাল ৩রা নভেম্বর মঙ্গলবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ কৃষি ব্যাংক চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মহাসীন মাখনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আল-মাহমুদ বাবু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ্, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা তপন, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি, জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক মোর্শেদা আক্তার লিপি, মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাসীনা হক কল্পনা, মহাকালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বিরাজ, গুয়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকন, বাউশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রধান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মনিরুজ্জামান রিপন, মনিরুজ্জামান শরীফ, কাউন্সিলর জাকির হোসেন, মকবুল হোসেন, আব্দুল মান্নান দর্পন, নার্গিস আক্তার, জলিল মাতবর, রহিম বাদশা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিকী মিঠুন, গজারিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার আহমেদ ফরাজী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা কমিটির সভাপতি রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আপন দাস, গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ৩রা নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক ঘৃণ্য ও কলঙ্কিত দিন। বাঙালি জাতির জীবনে বেদনাবিধুর কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এমন বর্বরোচিত হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৫ আগস্টের মাত্র ২ মাস ২০ দিন পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় প্রবাহিত করে দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে বিপথে নিতেই কাপুরুষোচিত এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশমাতৃকার সেরা সন্তান এই জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে একাত্তরে পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। বাঙালিকে পিছিয়ে দিয়েছিল প্রগতি-সমৃদ্ধির অগ্রমিছিল থেকে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।
তিনি বলেন, আসলে হত্যাকারীরা এবং তাদের দোসররা চেয়েছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রতিশোধ নিতে, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশটিকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের আবর্তে নিক্ষেপ করতে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিকতার পথ থেকে সদ্য স্বাধীন দেশটিকে বিচ্যুত করা এবং বাংলাদেশের মধ্যে থেকে একটি মিনি পাকিস্তান সৃষ্টি করা। এখানেই শেষ হয়নি স্বাধীনতার শত্রুদের ষড়যন্ত্র। ৭৫’এর পর থেকে বছরের পর বছর বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা চলে। বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যাকান্ডের নেপথ্যের কুশীলব হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ৩ নভেম্বরের নৃশংস হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সামরিক স্বৈরশাসক খুনি জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্ট থেকে খুনি ফারুক-রশিদ গং এবং খুনি মোশতাকের সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালিত হতো জিয়ার নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে। জেল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় খুনি ফারুক-রশিদ জিয়া-মোশতাকের মিলিত ষড়যন্ত্রে। যা পরবর্তীতে খুনিদের সাক্ষাৎকার এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলায় উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়া প্রথমে মোশতাককে দিয়ে এবং পরে নিজে বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করে ১৫ আগস্ট ও ৩রা নভেম্বরের খুনিদের রক্ষা করে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে খুনিদের রক্ষা করার প্রয়াস চালায়। এমনকী ১৫ আগস্টের খুনি ও জেল হত্যাকারী ১২ জনকে কূটনৈতিক মিশনের চাকরি দিয়ে মেজর জিয়া পুরস্কৃত করেছিল। ইতিহাস তাদের কখনো ক্ষমা করবে না।