লাইফস্টাইল ডেস্ক : রান্নাঘরে বা দুর্ঘটনায় কেউ আগুনে পোড়ার শিকার হলে আমরা অনেকেই তাড়াহুড়ো করে বরফ দিতে ছুটে যাই। ভাবি বরফ দিলে ঠান্ডায় ব্যথা ও জ্বলা কমবে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এটি বিপজ্জনক অভ্যাস। পোড়া চামড়ায় বরফ দিলে উপকার তো হয় না, বরং ত্বক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছে- পোড়া জায়গা ঠান্ডা (কক্ষ তাপমাত্রার) পানি দিয়ে ধুতে হবে, কখনোই বরফ ব্যবহার করা যাবে না। বরফের অতিরিক্ত ঠান্ডা ক্ষতি বাড়াতে পারে। কিন্তু কেন?
যে কারণে বরফ দেবেন না-
ক্ষতি বাড়তে পারে: বরফ অত্যন্ত ঠান্ডা হওয়ায় পোড়া জায়গায় বরফ দিলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। এতে পোড়া চামড়ায় রক্ত চলাচল কমে যায় এবং টিস্যু আরও নষ্ট হতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা এটিকে ‘কোল্ড ইনডিউসড্ ইনজুরি’ বলেন।
স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: ত্বক পুড়ে গেলে ত্বকের নিচের স্নায়ুগুলো অরক্ষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডায় স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। সাময়িকভাবে ব্যথা কমছে মনে হলেও এতে স্থায়ীভাবে অনুভূতি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পোড়া জায়গা ফেটে যেতে পারে: বরফ দিয়ে ঘষলে বা ত্বকে সরাসরি দিলে চামড়ায় ফাটল ধরতে পারে, যা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঠান্ডা পানি কেন সেরা উপায়?
ব্যথা কমায়: ১৫-২০ মিনিট ধরে সরাসরি চলমান ঠান্ডা পানি, অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিলে ত্বক ঠান্ডা হয় এবং ব্যথা দ্রুত কমে।
রক্ত চলাচল ঠিক থাকে: পানি চামড়াকে ঠান্ডা করে কিন্তু বরফের মতো জমিয়ে ফেলে না। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং ক্ষত নিরাময় সহজ হয়।
ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে: পোড়া জায়গা পরিষ্কার হয় এবং জীবাণুর সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে। তবে পানি যেন পরিষ্কার হয়, সেদিকে খেলায় রাখতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ন গাইডলাইনস্ ও ব্রিটিশ বার্ন অ্যাসোসিয়েশন এর পরামর্শ অনুযায়ী যা করবেন এবং যা করবেন না –
করণীয়
>> ২০ মিনিট পর্যন্ত পোড়া স্থানে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিন।
>> পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।
>> হাসপাতালে দ্রুত নিন।
বর্জনীয়
>> বরফ বা ঠান্ডা জেল লাগাবেন না।
>> ফেটে যাওয়া চামড়া টানবেন না।
>> দেরি করবেন না।
আগুনে পোড়া একটি জরুরি অবস্থা। তাই আহতদের সঠিকভাবে চিকিৎসা শুরু করার জন্য আমাদের উচিত ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা। বরফ নয়, ঠান্ডা পানি -এটাই বিজ্ঞানসম্মত ও নিরাপদ পদ্ধতি। তাই নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও জানিয়ে দিন।
তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ন গাইডলাইনস্, ব্রিটিশ বার্ন অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক