নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ ঘর নির্মাণে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীনরা যে ঘর পাবেন তা নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের বর্তমান ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বন্দ্বে উঠে এসেছে ঘর তৈরিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ ঘর নির্মাণে অনিয়মের তদন্ত চলছে। ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের কালিরচর (ভাসানচর) এলাকায় রাস্তার পাশেই সবুজে ঘেরা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। এর আওতায় ২০০ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই কাজের তদারকি করছেন চিতলিয়া ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মো. শরীফ মিয়া। প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। তবে, কোন ঘরের কাজই সমাপ্ত হয়নি। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, রুবায়েত হায়াত শিপলু গত বছরের ১২ জুলাই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। কাজটির তদারকি দেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ মুন্সিকে। তার চাকুরির ৯ মাসের মাথায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মুন্সীগঞ্জে চলে আসেন হামিদুর রহমান। তাকে সরিয়ে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানকে মুন্সীগঞ্জে আসার কয়েকদিন পর গত ২০ এপ্রিল দায়িত্ব ছেড়ে শিপলু মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে চলে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পরপরই হামিদুর রহমান আশ্রয়ণ প্রকল্প এলকার নির্মাণ কাজের দায়িত্বও বুঝে নেন। কাজের মান নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিপলুর ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ মুন্সীর সাথে। আজাদ মুন্সী নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরির অভিযোগ তুলেন এবং দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। এদিকে, তদন্তের আভাস পেয়েই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান শ্রমিকদের দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ কাজ সংশোধন করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যেসব ঘর ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, সেই ঘরে লাগানো লিংটেল, টিন, ইটের গাঁথুনি ও দরজা-জানালার স্টিল পরীক্ষা করলে কোনো কিছুই প্রাক্কলন অনুযায়ী পাওয়া যাবে না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনায় ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করার কোন নিয়ম নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাদ্দকৃত অর্থের আয় ও ব্যয় করবে। ঠিকাদার নিয়োগের কোন সুযোগ নেই। আজাদ মুন্সীর কাজের ত্রুটি ছিলো। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে টাকাও নিয়েছে। যার কোন নিয়ম নেই। কাজের ত্রুটি ধরা ও অনিয়ম পাওয়ার পর আজাদ মুন্সী নিজেই চলে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুই লেবার সর্দারের মাধ্যমে ৮৫ জন শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
লেবারদের পাওনা মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের কিছু টাকা দেয়া হয়েছিলো। তারা আজাদ মুন্সীর অধীনে কাজ করেছে। লেবারদের আজাদ মুন্সীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ বা থানায় মামলা করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু তারা কোনটাই করেনি। কাজের ত্রুটি প্রসঙ্গে আজাদ মুন্সী বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বারবার বলা হয়েছিলো হিসেব নিয়ে বসতে। তিনি বসেননি। পরে বাধ্য হয়ে লিখিতভাবে তাকে হিসেব বিবরণী দিয়ে এবং তা রিসিভ কপি নিয়ে চলে এসেছি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগে ওএসডি হলেন সদর উপজেলার সাবেক ইউএনও ও বর্তমান সহকারি কমিশার (ভূমি) শেখ মেজবাহ উল সাবেরিন। এর আগে ঘর নির্মাণের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অতিরিক্ত পরিচালক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, অনিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাভোগীদের দেয়া হবে নতুন ঘর।