নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা মহামারির কারণে সাড়ে চার মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘদিন পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার। সৈকতের শহর এখন পর্যটকে ঠাসা। উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা। পর্যটনের ওপর নির্ভর করে যারা নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা বিগত দিনের ক্ষতি পোষানোর স্বপ্নে বিভোর। আর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না হলে আগামী কয়েক মাসে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের লাবণী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট হাজার হাজার পর্যটকে ঠাসা। তারা বালিয়াড়িসহ সাগরের নোনাপানিতে আনন্দে মেতেছেন। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ সেলফিতে মেতে উঠেছেন। কেউ সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভেজাচ্ছেন, কেউবা সি-বেঞ্চে বসে আছেন আরাম করে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন অনেকে। কক্সবাজারের হোটেল, কটেজ ও রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। সৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, ইনানী, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, বার্মিজ মার্কেট, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ অন্য স্পটগুলোতেও পর্যটকরা আসছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো তোড়জোড় নেই। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সব ঠিকঠাক থাকলে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল ও পর্যটন ব্যবসা শুরু হবে। করোনার কারণে প্রায় সাড়ে চার মাস পর ১৯ আগস্ট কক্সবাজারের পর্যটক কেন্দ্রগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাড়তে থাকে পর্যটকের আনাগোনা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো উপচেপড়া ভিড় থাকে সাগর তীরে। পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল সৈকতের ফটোগ্রাফার, জেড স্ক্রি চালক ও হকার- দীর্ঘদিন পর হলেও সৈকতে পর্যটক বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে তাদের মধ্যে। সৈকতে পর্যটকের চাপ বাড়ায় তিনটি পয়েন্টে টহল ও টাওয়ার বসিয়ে সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। এদিকে সৈকতে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি থাকতে আর ভালো লাগছে না। অনেকে বিষন্ন। তাই একটু বিনোদনের জন্য সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন অনেকেই। ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়ার পর থেকে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। এ কারণে অনেক হোটেলে আগে থেকে অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তবে কেউ যেন ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ ভাড়া না দেন, সে ব্যাপারে তদারকি হচ্ছে।’ কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় স্থবিরতা এসেছে পর্যটন খাতের ব্যবসায়। গত পাঁচ মাসে এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে। এখন অনেকটা পর্যটন ব্যবসা হচ্ছে এভাবে চালু থাকলে পর্যটননির্ভর হোটেলসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাভবান হবেন।’ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের সব সেবা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। পর্যটন স্পটের সব মুখে বিচ কর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সমন্বয়ে মাস্ক ব্যবহার করতে মাইকিং করা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যদের কয়েকটি টিম পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে। সৈকতে পুলিশ বক্স থেকে সবসময় মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
প্রাণ ফিরেছে কক্সবাজারে, ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা
আগের পোস্ট