নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাঁশের চাষাবাদ কমে যাওয়া ও বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রীর বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের নানা জিনিসের সহজলভ্যতা এবং সেসব সামগ্রী তুলনামূলকভাবে দামে কম হওয়ায় বাঁশ-বেত সামগ্রীর চাহিদা বাজারে কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প। ফলে এ পেশায় নিয়োজিত বিভিন্ন উপজেলার শত শত পরিবারকে আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে চলতে হচ্ছে। অনেকে আবার বংশপরম্পরায় করে আসা এ পেশা ছেড়ে নিয়োজিত হচ্ছেন ভিন্ন পেশায়।
অপরদিকে বাজারে এ শিল্প সামগ্রীর বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের নানা জিনিসের সহজলভ্যতা এবং সেসব সামগ্রী তুলনামূলকভাবে দামে কম হওয়ায় ধীরে ধীরে এ কুটির শিল্পে নেমে এসেছে ধস। জানা গেছে, সুপ্রাচীনকাল থেকে বিক্রমপুরের গোয়ালীমান্দ্রা, শিবরামপুর, ভাগ্যকুল, শ্রীনগরসহ উপজেলার গ্রামগুলোতে বাঁশ-বেত শিল্পের প্রসার ঘটে। এসব গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা বাঁশ-বেত শিল্প নির্ভর হওয়ায় আশপাশে দ্রুত এ শিল্পের নামে পরিচিতি লাভ করে পুরো অঞ্চলটি। বিক্রমপুরের বাঁশ-বেত শিল্পীরা তাদের সুনিপুণ হাতের কারুকাজে তৈরি করতো সৌখিন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় হরেকরকম সামগ্রী। তাদের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে ছিল- শীতলপাটি, চাটাই, ডুল, হাতপাখা, পুড়া, দোলনা, বাঁশি, ঝুড়ি, চালনা, কুলা, মড়া, সাজি, আফরো, চাই, বুচনা, চেলনি খলনি ইত্যাদি নানা বাহারি জিনিস। পরিবারের ছেলে, বুড়ো, নারী, শিশু সবাই মিলে পারিবারিক পরিবেশে এ কাজ করা যেত বলে সকলেই কর্মজীবী ছিলেন। এতে তাদের জীবন চলতো বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। ফলে এ কুটির শিল্পের কাজ দ্রুত প্রসারিত হয় গ্রামে গ্রামে। এ শিল্পের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী হিসেবে বাঁশের চাষও হতে থাকে বাড়ি বাড়ি।
কিন্তু এই অঞ্চলের বাঁশ-বেত শিল্পের সে ঐতিহ্য বর্তমানে আর নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নতুন আবাসন তৈরিতে ভূমি ব্যবহার হতে থাকায় বাঁশ চাষের প্রয়োজনীয় ভূমি কমে গেছে। অপরদিকে বাজারে এ শিল্প সামগ্রীর বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের নানা জিনিসের সহজলভ্যতা এবং সেসব সামগ্রী তুলনামূলকভাবে দামে কম হওয়ায় ধীরে ধীরে এ কুটির শিল্পে নেমে আসে ধস। ফলে অধিক পরিশ্রম করে এ সামগ্রী তৈরি করে সংসার চালানো কষ্টকর। অনেকে এ কর্ম ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকে অন্য কাজে মানিয়ে নিতে না পারায় আঁকড়ে ধরে আছেন এ পেশা।
ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্পটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপজেলার একাধিক কুটির শিল্পের মালিকেরা বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রতিটি কৃষক পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী হলো এইসব জিনিস। কৃষি শস্য সংরক্ষণ এবং প্রতিদিন ব্যবহার্য এসবের বিকল্প কখনোই প্লাস্টিক সামগ্রী হতে পারে না। পরিবেশবান্ধব এ কুটির শিল্পটিকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
প্লাস্টিকের সহজলভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে বিক্রমপুরের বাঁশ-বেত শিল্প
আগের পোস্ট