নিজস্ব প্রতিবেদক
মুক্তিযুদ্ধ না করা বাবাকে কখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কখনো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবার কখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামের ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে বাড়তি সুবিধা আদায় করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করতো সে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রতিনিধি বা সাধারণ মানুষ কেউ বাদ যায়নি তার এই প্রতারণা থেকে। ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মামুন সিকদার জানান, জমিজমা নিয়ে ইমাম হোসেন গংদের সাথে তার পরিবারের লোকদের মামলা চলছে। মামলায় তাদের ঘায়েল করার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে একটি অভিযোগ দেন ইমাম হোসেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। পরবর্তীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করে কোন সত্যতা পায়নি। এসময় মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য ইমাম হোসেনকে সাবধান করে দেওয়া হয়। আরেক ভুক্তভোগী দীপ্ত টিভির মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে ইমাম হোসেন গজারিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি নিজেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করেন। এছাড়াও তাকে হুমকি দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন অথচ মামলায় যে দিনের কথা বলা হয়েছে সেদিন তিনি ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। তার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। স্থানীয়রা জানান, নিজেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করা নয় আরো অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে। নিজেকে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল সার্ভেয়ার লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা জিতিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিসহ নানাভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করতো সে। গত কয়েকদিন আগে ইমাম হোসেন জনগণের জ্ঞাতার্থে একটি নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে তিনি লিখেছেন তার কথার অন্যথা কেউ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে চাকরি না করে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তিনি কিভাবে নোটিশ প্রদান করতে পারেন এবং তাকে কেউ পুলিশ দিয়ে হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুমকি দেন। ভিটিকান্দি গ্রামে সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা মাত্র দুইজন একজন সাহাবুদ্দিন প্রধান (ভুলু) আরেকজন শওকত ওসমান শিকদার। ইমাম হোসেনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ইমাম হোসেনের বাবা আব্দুর রউফ তাদের সাথে যুদ্ধ করেননি। তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন তারা সেটা জানেন না। তবে তিনি যুদ্ধের অনেক পরে মারা গেছেন স্থানীয়দের মাধ্যমে তারা সেটা শুনেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গজারিয়া উপজেলার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আব্দুর রউফ নামে ভিটিকান্দি গ্রাম থেকে কেউ তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন এমন কারো কথা তার মনে পড়ছেনা। আগের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যারা বাদ পড়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুনভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে। যার যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান সেখানেও আব্দুর রউফ নামে কেউ আবেদন করেননি বলে জানান তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ইমাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এ বিষয়টি তিনি তার দাদীর কাছ থেকে জেনেছেন। শুনেছেন তিনি যশোর এলাকায় যুদ্ধ করেছেন তবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে বা কোন প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কেন তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। এদিকে স্থানীয়দের দাবি মতে তার বাবার মৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে হয়েছিল। তবে তিনি কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তার অপরাধ স্বীকার করে তিনি নিজেকে কখনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করবেন না বলে জানান। এদিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অনেক আবেগের একটি জায়গা। অনেক সময় মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় ইমাম হোসেন সে সুবিধা পাওয়ার জন্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছেন সেজন্য তার শাস্তি দাবি করেন তারা।