এক মাস বন্ধ থাকবে কুন্ডের বাজারের সেতু, দূর্ভোগে মুন্সীগঞ্জের লাখো মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা না রেখেই মুুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান-টঙ্গীবাড়ী দুই উপজেলার কুন্ডের বাজারের ডহরী খালে বেইলি সেতুর মধ্যভাগ ভেঙে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকবে যানবাহনসহ পায়ে চলাচলের পথও। এতে দূর্ভোগের শঙ্কায় পড়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ী, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ।
মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুন্ডের বাজার বেইলি সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হবে। কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গত ১৬ মে থেকে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত এক মাস সেতুর উপর দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যানবাহনসমূহকে বিকল্প সড়ক হিসেবে ফতুল্লা-মুন্সীগঞ্জ-লৌহজং-মাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জেলার সিরাজদিখান-টঙ্গীবাড়ী দুই উপজেলার ডহরি খালের উপর নির্মিত বেইলি সেতুটির ওপর দিয়ে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ মাঝারি ধরনের যানবাহন চলাচল করতে না পারায় সেতুর নিচে ট্রলার দিয়ে পাড় হতে দেখা গেছে শত শত মানুষের। ট্রলার দিয়ে মোটরসাইকেল পার হতে নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। আর মানুষ পার করতে নিচ্ছে ৫ টাকা। এসব টাকা নিচ্ছে ট্রলার চালকেরা।
এ সড়ক দিয়ে আসা হরগঙ্গা কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, আমাদের এখন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। তাই আমাদের এই সড়ক ব্যবহার করে চলতে হয়। সকালে আমি মুন্সীগঞ্জে যাওয়ার পথে অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে শুনি এই রাস্তার ওপর সেতুটির মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। সেজন্য একমাস এই সেতুটি দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। তবে আমরা সিরাজদিখান থেকে যারা মুন্সীগঞ্জে পরীক্ষা দিয়ে থাকি, তাদের জন্য অনেক দূর্ভোগ হবে। এই সেতু দিয়ে না যেতে পারলে বালুচর হয়ে ঘুরে যেতে হবে। তাই আমাদের জন্য বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে বা পায়ে হেঁটে সেতু পার হওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পায়ে হেঁটে সেতু পার হতে পারলে ওই পাড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে পারবো। কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়। এখন আমাদের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর নিচ দিয়ে ট্রলার দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে।
পথচারী সবুজ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তারপুরে একটি দোকানে চাকরি করি। প্রতিদিন সকালে সিরাজদিখান থেকে অটো গাড়ি ধরে মুক্তারপুরে পৌঁছাই। অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে শুনেছি, আগামী এক মাস এই ব্রিজের কাজ ধরার কারণে বন্ধ থাকবে। এতে করে এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারবো না। তবে আমরা চাই পায়ে হেঁটে হলেও ব্রিজটি পার হতে। সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
অটোরিকশা চালক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা শুনেছি এই ব্রিজ নাকি মেরামতের জন্য আগামী এক মাস সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা চাই, অটোরিকশাগুলো যেন সেতু পর্যন্ত আসতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হবে। কারণ ব্রিজটিতে যদি পায়ে হেঁটে পার হয়ে ওই পাশে গিয়ে অটোরিকশায় উঠতে পারি তবে সমস্যা হবে না। তা না হলে যাত্রীদের অনেক দূর্ভোগ হবে।
কয়েকজন সিএনজি চালক জানান, শুনেছি কুন্ডেরবাজার ব্রিজটি আগামী এক মাস বন্ধ থাকবে। আমাদের বালুচর হয়ে বেতকা দিয়ে তারপর মুন্সীগঞ্জ সদরে যেতে হবে। সেজন্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোন যাওয়ার পথ নেই। মহাসড়ক দিয়ে যদি ঘুরে মাওয়ার কথা বলেন সেটা আমাদের জন্য অনেক দূর। সেইটা যাওয়ার চেয়ে না যাওয়াই ভালো। তবে পায়ে হেঁটে যাত্রীরা এপার থেকে ওপার যদি যেতে পারে, তবে যাত্রীদের জন্য অনেকটাই দূর্ভোগ কমবে।
মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা বলেন, বেইলি সেতুটির মধ্যভাগে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। মাঝের অংশ খুলে ফেলে নতুন বেইলি স্থাপন করা হবে। এজন্য যান চলাচলের পাশাপাশি মানুষের চলাচলও বন্ধ থাকবে। বেইলি সেতুটি মেরামত হলে সেতুর উপর দিয়ে বাসসহ ভারী যানবাহন চলবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে এখানে আরেকটি ১৫০ মিটারের স্টিলের সেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, কমবে জনদূর্ভোগ।