নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের মামলায় যে কয়দিন কারাগারে ছিলেন সে কয়দিন স্কুলেও যেতে পারেনি তার ছেলে শ্রেষ্ঠ মন্ডল। কতিপয় মানুষের অপবাদের কারণে সে ১৯ দিন স্কুলে যায়নি। বাবা হৃদয় চন্দ্র মন্ডল গত ১০ এপ্রিল রবিবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরদিন গতকাল ১১ এপ্রিল সোমবার অর্থাৎ ২০ দিনের মাথায় স্কুলে গেল হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের পুত্র শ্রেষ্ঠ চন্দ্র মন্ডল। তাকে পেয়ে সহপাঠীরা আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে শ্রেষ্ঠ মন্ডল। শ্রেষ্ঠ তার বাবার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকদের বলে, বাবা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে আমি খুব খুশি। আজকে ২০ দিন পর স্কুলে আসলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় গিয়েছিলাম ১১টার ফিরেছি। আমি সবুজ মামার সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই আমার খোঁজ নিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক ক্লাসে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্লাসে আসতে পেরে আজকে আরও বেশি ভালো লাগছে।
হৃদয় মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, হৃদয় মন্ডল জামিন পাওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি। মুন্সীগঞ্জ কারাগার হতে ছাড়া পেয়েই ঢাকায় যান চিকিৎসা করাতে। ৪/৫ দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন তিনি এমনটাই তার স্বজনরা জানান। হৃদয় মন্ডল ঢাকায় তার স্ত্রীর বড় বোনের বাসায় এখন অবস্থান করছেন। শ্রেষ্ঠ মন্ডলের মামা বাদল হালদার বলেন, ২০ দিন পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠর মামা সবুজ বাড়ৈ বাড়ি হতে ক্লাসে নিয়ে যায়। ক্লাস শেষে সাড়ে ১১টার দিকে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে আসে। আমার ভাগিনা স্কুলে যেতে পেরে খুব খুশি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোঁজ নিয়েছিলেন সে বাসায় এসেছে কিনা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, একটা হট্টগোল চলছিল তাই শ্রেষ্ঠ স্কুলে আসছিল না। আমি ওর মায়ের কাছে শুনেছি, বাচ্চাটা ছাদের ওপর উঠলে কারা যেন ওকে টিচ করেছে এজন্য স্কুলে আসেনি। হৃদয় মন্ডলের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। তিনি চাইলেই যেকোনো সময় ক্লাস শুরু করতে পারবেন। যতটুকু জেনেছি চিকিৎসা নিতে বর্তমানে হৃদয় মন্ডল ঢাকায় তার নিকট আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্রের শ্রেণী শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে ঐ ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা করার সময় তার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে ঐ স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্র। রেকর্ডে কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। তখন হৃদয় মন্ডল ধর্মকে বিশ^াস এবং বিজ্ঞানকে প্রমাণ ভিত্তিক জ্ঞান হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ থানায় বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়ের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলাটি করেন। মামলার পর থেকে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের গ্রেফতার মামলা এবং জামিন না পাওয়া নিয়ে সরব ছিলো সোশ্যাল মিডিয়া। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবীতে বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতিও দেয়। গত রোববার দুপুর দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। ১৯ দিন কারাবাসের পর বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল জামিন পান।
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের ছেলে শ্রেষ্ঠ মন্ডল ২০ দিন পর স্কুলে
আগের পোস্ট