নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক ও প্রবাসীরা রয়েছেন সেসব দেশে লিয়াজোঁ অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে চায় পুলিশ। তারা বলছে, প্রবাসী ও শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে নানা ধরনের জটিলতা ও মামলার মারপ্যাঁচে দেশে ফিরে আসেন। এছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশন, দেশ থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য দূতাবাসে পুলিশের একটি পদ সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি- বলছে সংস্থাটি।
আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০। পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ দাবি তুলে ধরবেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের এসপি থেকে ঊর্ধ্বতন সমমর্যাদার যেকোনো কর্মকর্তাকে দূতাবাসে কাজ করার অনুমতি চাইবেন তারা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের ৫১টি দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করে সেখান থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এজন্য বাংলাদেশ থেকে ভেরিফিকেশন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন পড়ে, যা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) থেকে দেয়া হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে। সেখান থেকে যায় এসবিতে। পরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন একই পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হয়। এতে প্রচুর সময় লাগে এবং পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার হন। বিদেশের দূতাবাসগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করলে কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি এসবিতে পাঠানো এবং ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, পলাতক আসামি প্রত্যাবাসন, সংশ্লিষ্ট দেশে শ্রমিকদের পুলিশি হয়রানি রোধসহ কল্যাণ-সংক্রান্ত বিষয় সরাসরি তদারকি করতে সে দেশের দূতাবাসে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ, অপরাধী প্রত্যাবর্তন, ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ জোরদার হবে। পলাতক সন্ত্রাসী বা বিদেশে থেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সহজ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগেও এ ধরনের একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সরকার সেটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও পুলিশ ক্যাডারের জায়গায় এসব কাজ করার জন্য প্রশাসন ক্যাডারে পাঠানো হয়। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজ করেন। বিদেশি দূতাবাসে পুলিশের পদ সৃষ্টির বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাত্তা না পেলেও এবার পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবার একই দাবি তোলা হবে।
পুলিশ যে ৪০টি মিশনে নিয়োগ পেতে চায় সেগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, তুরস্ক, কুয়েত, থাইল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কাতার, ওমান, মিসর, বাহরাইন, ব্রুনাই, মিয়ানমার, নেপাল, জর্ডান, ইরাক, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রিস, স্পেন, মরিশাস, লিবিয়া ও মরক্কো।
পুলিশের কল্যাণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকটি দাবি তোলা হবে। দাবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি আগের বছরও তোলা হয়েছিল। তবে অগ্রগতি না থাকায় নতুন দাবিগুলোর সঙ্গে আগেরগুলো যুক্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, এবার ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চাইবে পুলিশ। পাশাপাশি বাহিনীর সব সদস্যের জন্য অন্যান্য বিশেষ ভাতা চাইবেন তারা। এ ভাতার পরিমাণ অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত ভাতার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে নির্ধারণের দাবি জানানো হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি। এর বাইরে পুরোনো দাবিগুলোর মধ্য থেকে পুলিশ বাহিনীর জন্য নিজস্ব মেডিকেল কলেজ নির্মাণ, শতভাগ রেশন প্রদান, পৃথক পুলিশ বিভাগ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে ফোর স্টার জেনারেলের পদমর্যাদা ইত্যাদি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের পুলিশ প্রধানের র্যাংক বাংলাদেশের আইজিপির র্যাংকেরও ওপর। এ কারণে অনেক সময় বিদেশি অনুষ্ঠানগুলোতে গেলে আমাদের বিব্রতবোধ হতে হয়। তাই এবার আইজিপিকে ফোর স্টার জেনারেলের পদমর্যাদা দানের দাবি তোলা হবে।
এছাড়া এবার পুলিশ সদস্যদের শতভাগ রেশন সুবিধা এবং অভিযানে কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে তার পরিবারের জন্য ১৫ লাখ টাকা ভাতার দাবি তোলা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হলে তিনি পাঁচ লাখ টাকা পান। অথচ চাকরিরত অবস্থায় (ছুটিতে থাকলেও) কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তাকে আট লাখ টাকা দেয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা এটি ‘চরম বৈষম্যমূলক’ বলে মনে করছেন। কারণ আমরা সবসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করি। তাই এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে ১৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি প্রতি বছরের মতো এবারও পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে। বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন থাকবে অনুষ্ঠান ঘিরে। বছরজুড়ে পুলিশের যেসব কর্মকর্তা ভালো কাজ করেছেন, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। পাশাপাশি পুলিশি সেবার মান বাড়াতে নানা যৌক্তিক দাবিও তুলে ধরা হবে।’
বিদেশি দূতাবাসেও কাজ করতে চায় পুলিশ
আগের পোস্ট