নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখনি মন্ত্রীদের একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। ‘অতিরঞ্জিত ও বিতর্কিত’ বক্তব্যে ক্ষিপ্ত এখন খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। ‘বেহেশত’ থেকে ‘ভারত’ অতিবচনের কারণেই দেশে এখন সমালোচিত ব্যক্তি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। দেশের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪৪ টাকা বৃদ্ধি করার কারণে যখন জনমনে অসন্তোষ, বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম, ঠিক তখনই বললেন ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’। এমন মন্তব্য করে আগুনে ঘি ঢেলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে আলোচনার মুখে পড়েন মোমেন। এর রেষ যেতে না যেতেই বৃহস্পতিবার রাতে বলেছেন ‘ভারতকে বলেছি আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার করতে’। এরপর আবার নতুন করে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অর্থাৎ ‘বেহেশত’ থেকে ‘ভারত’ বিষয়ে এসব মন্তব্য করে জনমনে যেমন অসন্তোষ তেমনি হাসির পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন অতিবচন কখনো আশা করে না দেশের মানুষ। এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এই বিষয় নিয়ে নিজেরাও ক্ষিপ্ত।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মতে, আগামী বছরের শেষের দিকে কিংবা পরের বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগেই মন্ত্রীদের অতিবচনে একের পর এক ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে সরকার। দলের হাইকমান্ড থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েও মন্ত্রীদের অতিবচন থামানো যাচ্ছে না। মন্ত্রীদের এসব বেফাঁস কথাবার্তায় সরকারের হাইকমান্ড নাখোশ হয়েছে বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের যখন জীবনযাপনে নাভিশ্বাস তখন মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে দলটি ও সরকারকে।
বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে নেই, প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামা-কাপড় রয়েছে, মানুষ চাইলেই তিন বেলা মাংস খেতে পারে। মন্ত্রীদের এমন নানা মন্তব্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও বিব্রত এবং সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার বক্তব্য হিসেবেই দেখছেন তারা।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, এমন অতিকথনে বক্তা নিজে যেমন হাস্যরূপে পরিণত হচ্ছেন, তেমনি সরকারকে বিব্রত করছেন। মন্ত্রীদের কথাবার্তায় আরও সংযমী হয়ে নিজের দপ্তর ও নির্বাচনী এলাকায় কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকা উচিত। জনগণ এখন অনেক সচেতন। কথায় আর চিড়ে ভেজে না। কাজ দিয়েই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, কেউ বিতর্কিত মন্তব্য করবে আর সমালোচনার মুখে পড়বে। এতে করে দল যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে না বিষয়টি এমন না।
মন্ত্রীদের একের পর বিতর্কিত মন্তব্য দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন বলেন, বিতর্কিত মন্তব্যে অবশ্যই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তবে আমি বলবো যার যার দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আরও দায়িত্ববান সতর্ক হয়ে কথা বলতে। কারণ কারো বক্তব্য বন্ধ করতে বলা সম্ভব না। তাই সতর্ক এবং সংযত হয়ে কথা বলাই ভালো।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো বিব্রতকর মন্তব্য আশা করে না। এ ধরনের মন্তব্যে আওয়ামী লীগ অবশ্যই বিরক্ত, বিব্রত। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, সবসময় মানুষের কথাই চিন্তা করে। কিন্তু কেউ যদি বিতর্কিত মন্তব্য করে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেটা আসলে কাম্য নয়।
‘বেহেশত’ থেকে ‘ভারত’, ফের বিতর্কে মোমেন
আগের পোস্ট