নিজস্ব প্রতিবেদক
নদীবেষ্টিত মুন্সীগঞ্জ জেলা। শ্রীনগর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে অসংখ্য খাল-নালা-বিল। অথচ শ্রীনগরবাসীর খাবারের প্লেটে জোটে না দেশি মাছ। এখানকার চাহিদা পূরণ হয় অন্য জেলা থেকে আসা ও চাষ করা মাছে। ড্রেজার দিয়ে বালুভরাটের কারণে পুকুর, খাল-বিল, নালাসহ মৎস্য সম্পদের সব উৎস চাপা পড়েছে বালুর নিচে। নদীর পাড় ঘেঁষে শোভা পাচ্ছে বাড়িঘর, দালান। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে মাছের আবাসস্থল।
শ্রীনগর এলাকার বাসিন্দা আসলাম মিয়া বলেন, প্রভাবশালীরদের কারণে নদ-নদীতে মাছতো নেই-ই, এমনকি পানিতে গোসলও করা যায় না। গোসল করলে শরীর চুলকায়, নানা রোগ দেখা দেয়। ফলে একসময় সুখ্যাতি পাওয়া মলা, ঢেলা, সরপুঁটি, স্বর্ণপুঁটি, মহাশোল, শিলং, দেশি পাঙাশ, বইচ্চা, ঘাউরা, দেশি রিঠা, দেশি চিতল, গজার, ঘইন্না, টেংরা, আইড়, খইলসা, ফলি, খল্লা, চান্দা প্রভৃতি মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে শ্রীনগরের খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর মাছ মিলতো। খালে ও নদীর ত্রিমোহনায় বছর জুড়ে একাধিক বড় বড় বাঁশ পুঁতে বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ ধরতো জেলেরা। বড়শি ফেললেই মাছ মিলতো। শীতকালে যখন ক্ষেত-খামারের পানি শুকিয়ে যেত তখন বিল ও নীচু জমিতে কচুরিপানা পরিষ্কার করে কাদাময় পানিতে মাছ ধরার ধুম পড়তো। দেশীয় মাছের সেই সোনালী দিন হারিয়ে গেছে। আগে বর্ষায় পুকুর বা খালে গাছের ডালপালা ফেলে রাখা হতো। যাতে মাছ আটকা থাকে। শীতকালে সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ করে শুক্রবারে সবাই মিলে মাছ ধরতো। শোল, গজার, বোয়াল, রুই, কাতলা, মেনি, খইলসা, কই, মাঝারি আকারের শিং, মাগুর ও ফলি মাছের দিন ছিল।
বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ফজল আহমদ বলেন, আশির দশকে বর্ষা মৌসুমে খাল বিলে নতুন পানি আসতো। তখন মাছ ধরার ধুম পড়তো। দিন-রাত মাছ ধরতাম। এসব কথা এখন গল্প হয়ে গেছে। কত তরতাজা মাছ খেয়েছি। এখন খাই চাষের মাছ। খালবিল না থাকায় দেশি মাছ মেলে না।
তিনি আরও বলেন, ছয়-সাত বছর আগেও কিছু মাছ পাওয়া যেত। এখন বছরের মধ্যে কয়েকমাস পাওয়া যায়। বাকি সময় মাছ চোখেও দেখা যায় না।
মাছ ব্যবসায়ী ইউনুছ বলেন, নদীর মাছ এখন চোখেও দেখি না। শ্রীনগরের হাটবাজারে বিভিন্ন নদী ও খালের মাছ আসতো। এখন দেখি না। মানুষের ভরসা এখন চাষের মাছ। এখন মাছ তো দূরের কথা, মানুষ গোসলই করতে পারে না। পুকুর, খাল-বিল বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলছে।