নিজস্ব প্রতিবেদক
একদিকে করোনা আতঙ্ক অন্যদিকে পদ্মা ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, হাইয়ারপাড়, বড়াইল, মূলচর, পাঁচগাঁও ও হাসাইলসহ ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। ভাঙ্গন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের শুকনো মৌসুমে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সারাবছর পদ্মায় অবৈধ ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন, ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি, দ্রুতগামী ট্রলার চলাচল এবং বালুভর্তি জাহাজের ঢেউ আর স্রোতের কারণে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পদ্মা তীরে দ্রুত অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ করার পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে ভরা বর্ষায় পদ্মায় বিলীন হতে পারে পদ্মা তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনার আতঙ্কের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে পদ্মা পাড়ের খেটে খাওয়া মানুষ। নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। দিঘীরপাড় ইউনিয়নের হাইয়ারপাড় গ্রামের হাইয়ারপাড় আল মদিনা জামে মসজিদটি নদীতে হেলে পড়েছে। মসজিদটির ফ্লোরের নিচের অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে পুরো মসজিদটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। মাত্র ৪ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিলো আধুনিক এই মসজিদটি। ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থানীয়রা নিজস্ব অর্থায়নে দিচ্ছে অস্থায়ী বাঁধ। দিঘীরপাড় ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গ্রামবাসীরাও বসতভিটা রক্ষার জন্য বাঁধ দিচ্ছে। নিম্ন পদ্মা তীরবর্তী লোকজন পড়েছেন বেশী বিপাকে। অর্থের অভাবে তারা পারছেনা বাঁধ নির্মাণ করতে। অনেকে আবার ঘরবাড়ী পিছিয়ে নিচ্ছে নদীর তীর থেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, এলাকাটিতে সারাবছর পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে গ্রামগুলো। স্থানীয়দের অভিযোগ একজন ইউপি চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা মিজান খাঁন, সদর উপজেলার রাকিরকান্দি গ্রামের ইসমাইল বেপারী, শাহদাত বেপারীসহ একটি বালুদস্যু চক্র সারা বছরই পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন করে। বালুদস্যু এই চক্রটি বর্তমানে দিনের বেলায় আনলোড ড্রেজার দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় বালু ভরাট করছে এমনটাই দেখায়। অথচ রাতের আঁধারে পাল্টে যায় তাদের চিত্র। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রাতে ফসলি জমির পাশে ড্রেজিং করে বালু বাল্কহেডে আনলোড করে রাখে। দিনের বেলায় সেই বালু আনলোড ড্রেজারের সহায়তায় পাইপ বসিয়ে বিভিন্ন এলাকার ডোবায় ফেলা হয়। উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ ও অর্থদন্ড প্রদান করলেও থেমে নেই এই চক্রটি। অন্যদিকে ভাঙ্গন প্রবন এলাকাটিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য লৌহজং উপজেলা ছনবাড়ী হতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য ৪ শত ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এটা মন্ত্রী পরিষদে পাশ হয়ে একনেকে অনুমোদনের জন্য রয়েছে। গত বছর সরকারীভাবে কামারখারা ও দিঘীরপাড় ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিলো। গ্রামবাসীরা বর্ষা মৌসুমটি কিভাবে টিকিয়ে রাখবে তাদের ঘরবাড়ী? এমন আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন পদ্মা তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো। টঙ্গিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভূতু বলেন, নতুন করে নদীটা ভাঙ্গনের প্রধান কারণ হলো অবৈধ ড্রেজিং। পাশাপাশি বালুভর্তি বাল্কহেড ও ট্রলারের ঢেউয়ের তোড়েও ভাঙ্গে। আমি ২ বার ড্রেজার আটকিয়ে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন আবার তারা বালু কাটা শুরু করেছে। ভাঙ্গন রোধে দিঘীরপাড় ও হাইয়ার পাড় এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয়রা অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ হাসিনা আক্তার বলেন, আমরা যখন অভিযানে যাই তখন ওখানে গিয়ে ড্রেজারের পাইপ এবং কর্মচারীদের পাই। আমরা যাওয়ার আগেই অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। ওই এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান করে ড্রেজারের পাইপ এবং ড্রেজার জব্দ করেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি কিংবা আরো বড় কেউ হলেও তাকে আমরা ছাড় দিবো না। নদী ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ভাঙ্গনের কবলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম
আগের পোস্ট