আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ : ভোগান্তি আর প্রতারণার নাম মুন্সীগঞ্জ মুক্তারপুর-গুলিস্থান রুটের বিআরটিসি বাস সার্ভিস। অচল, লক্কর ঝক্কর জোড়াতালি দেওয়া অধিক পুরনো চলাচলের অযোগ্য গাড়ি দিয়ে চলছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর টু গুলিস্তান বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস। বুড়ো মানুষের দাঁতের মতই গাড়ির যন্ত্রাংশ নড়ে চড়ে আর কটকট আওয়াজ হয়। বৃষ্টি এলেই গাড়ির ভেতরে সিটের মধ্যে পানি পড়ে। এসি বাস কিন্তু বাসের অধিকাংশ এসি নষ্ট। এসি যেগুলো ঠিক আছে সেগুলোর আবার বাতাস নিয়ন্ত্রণের কভার নেই। ফলে এসি নিয়ন্ত্রণ করতে এসির ফাঁকা অংশগুলো জানালার পর্দা গুঁজে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বাতাস। সিটের উপর এসির পানি পড়ে। কোন সিটই শতভাগ ঠিক নেই। এছাড়াও গাড়িতে সবসময় অনেক ময়লা থাকে। গাড়ির সামনে পেছনে বিভিন্ন অংশে জোড়াতালি দেওয়া। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কারণে মাঝ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। কখনো গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে পড়ে, কখনো চাকা ফাটে। শুরু হয় ভোগান্তি। রাস্তায় মধ্যে অপেক্ষা করতে হয় কয়েক ঘন্টা।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় মুক্তারপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস ঢাকা মেট্রো ব- ১৫- ৭০২৪ নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ফরাজিকান্দা গিয়ে গাড়িটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১ ঘন্টা অপেক্ষার পর আবার আরেকটি গাড়ি আসে।
নষ্ট গাড়ির ভুক্তভোগী একজন যাত্রী জানান, চাকরির সুবাদে প্রতিদিনই ঢাকা যাতায়াত করি। অতি পুরনো গাড়ি হওয়ার কারণে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যেই রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়।
ভুক্তভোগী এক ছাত্র জানায়, ঢাকায় গিয়ে ক্লাস করতে হয়। মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে কয়েকদিনই ক্লাস মিস হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, এ রুটে যে গাড়িগুলো চলছে সেগুলো চলাচলের অযোগ্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুন্সীগঞ্জের নেতাদের ম্যানেজ করে বাতিল আর ভাড়া বেশি নিয়ে চলছে মুক্তারপুর-গুলিস্তান এ রুটের লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস সার্ভিস। এ রুটে মাঝেমধ্যে অন্য কোম্পানির ভাল গাড়ি চালু হলেও অদৃশ্য কারণে দুই-তিনদিনের মধ্যেই ভাল গাড়িগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুন্সীগঞ্জের মানুষ সবসময়ই নানা কারণে অবহেলিত। কোন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুন্সীগঞ্জের উন্নয়নে কিংবা এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করেনি। নেতারা টাকা খেয়ে ভাল গাড়িগুলো বন্ধ করে দিয়ে বাতিল, অচল গাড়ি এনে এখানে চালাচ্ছে।
গাড়ির ড্রাইভার ও স্থানীয়দের তথ্য সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুই ভাগে মুক্তারপুর-গুলিস্তান রুটের বিআরটিসি বাস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। টাকার একটি ভাগ স্থানীয় নেতাদের পকেটে যায়। যার ফলে অন্য কোন ভাল বাস এ রুটে এসে স্থায়ী হয় না। জোরপূর্বক কিংবা মামলা-হামলার মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায়। নেতাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। তাদের নাম প্রকাশ করার সাহসও পায় না। কারণ সিন্ডিকেটের লোকেরাই টিকিট কাউন্টার নিয়ন্ত্রণ করে। টিকিট কাউন্টারের সামনে সবসময়ই সিন্ডিকেটের কেউ না কেউ উপস্থিত থাকে।
গতকাল বুধবার সকালে মুক্তারপুর ব্রিজের কাউন্টারে ডিউটি করা আফজাল হোসেন কোন বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।
ভাল উন্নতমানের বিআরটিসি ছাড়াও অন্য কোম্পানির বাস মুক্তারপুর-গুলিস্তান রুটে চলবে, মুন্সীগঞ্জের মানুষের ভোগান্তি কমবে -এমনটাই প্রত্যাশা।
ভোগান্তির নাম মুক্তারপুর-গুলিস্তান বিআরটিসি বাস সার্ভিস
আগের পোস্ট