নিজস্ব প্রতিবেদক
অনেক বছর পর এবার আলু ব্যবসায়িরা চুটিয়ে আলুর ব্যবসা করলেন। এবারের মতো আলুর দাম আর কখনো বাড়েনি বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। বাড়তি দামে আলুর টাকা ঘরে উঠতে না উঠতে এবার মুন্সীগঞ্জে প্রান্তিক আলু চাষীরা চলতি মৌসুমে আলু আবাদের জন্য প্রস্তুতি শুরু করছেন। নিচু জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই আলু চাষীরা মহা উৎসবে কোমর বেঁধে আলু আবাদে নেমে পড়ছেন। ইতোমধ্যেই উঁচু জমি থেকে পানি নেমে গেছে। অক্টোবরের মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই চাষীরা আলু আবাদে জমিতে নেমে পড়েছেন। এই আবাদ আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। এখানকার জমি আলু উৎপাদনে উপযোগী। মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ জমিই নিচু এলাকায়। নিচু এলাকার জমিগুলো বর্ষার পানিতে বেশিরভাগ সময়ই ডুবে থাকে। এ কারণে বর্ষার সময় জমিতে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি পড়ে, যা আলু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদের সাথে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার চাষী জড়িত রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের আলুর জমিতে কাজ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসে এখানে। এর মধ্যে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরাও রয়েছে। তবে কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকে বেশি শ্রমিক এখানে কাজ করতে আসে বলে জানা গেছে। তারা আলু আবাদের সাথে জড়িত চাষীদের বাড়িতে একচালা ঘরে থেকে এখানে এ আলু আবাদের কাজ করে থাকে। মুন্সীগঞ্জে মোট হিমাগার রয়েছে ৬৮টি। এই হিমাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন আলু। এসব হিমাগারে চাষীরা খাবার আলুর পাশাপাশি ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন। আর সেই আলু বীজ দিয়েই চাষীরা পরে আলু আবাদ করে থাকেন। প্রকৃত আলু চাষীরা আলু বেশি উৎপাদনের আশায় প্রথমবার হল্যান্ডের বাক্সের আলু আবাদ করে সেখান থেকেই বীজ আলু সংরক্ষণ করেন। তবে আলু চাষীরা ওই আলুবীজ দু’বারের বেশি আবাদ করেন না। লোকাল এ পদ্ধতিতে আলু বীজ চাষীদের অনেক উপকারে আসে এবং চাষীদের আলু বীজের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এখন আর আগের মতো বিদেশী আলু বীজ ও বিএডিসির আলু বীজের জন্য আলু চাষীদের অপেক্ষা করতে হয় না। বিএডিসির হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ২ হাজার টন আলু বীজ। জেলায় আলু বীজের চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার ৬০০ টন। মুন্সীগঞ্জের আলু বীজ ব্যবসায়ীরা ৫০ কেজির বাক্স হল্যান্ড থেকে এ বছর আলু বীজ আনবেন প্রায় ১ লাখ টন। সেক্ষেত্রে আলুবীজ মুন্সীগঞ্জ লোকাল বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে এখানকার আলু চাষীরা মনে করেন। মুন্সীগঞ্জে প্রচুর আলু উৎপাদন হলেও হিমাগারের ধারণ ক্ষমতার অভাবে আলু চাষীরা গ্রাম্য তিন পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করে থাকেন। এক হচ্ছে চৈত্র মাসে আলু জমি থেকে তোলার পর জমিতেই আলু নাড়া দিয়ে স্তুপ করে রেখে দেয়া হয়। জমিতে পানি না আসা পর্যন্ত প্রায় দুই মাস এ পদ্ধতিতে আলু জমিতেই রেখে চাষীরা বিক্রি করে থাকেন। অনেক চাষি নিজের বসতবাড়িতে এবং আলাদা মাচাঘর তৈরি করে ছয় মাসের মতো আলু রেখে ধীরে ধীরে বিক্রি করেন।
মহা উৎসবে মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদ শুরু
আগের পোস্ট