নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকায় বিশ্বজিৎ বনিকের খামারে রয়েছে বর্তমানে প্রায় ২ শতাধিক গরু ও বাছুর। এরই মধ্যে ৮০টি গরু বর্তমানে দুধ দিচ্ছে। প্রতিটি গরু ১৪-১৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। ওই খামারে উৎপাদিত দুধের রয়েছে বিশাল চাহিদা। স্থানীয়রা এসে দুধ নিয়ে যান খামার হতে। তাছাড়া ওই খামারে উৎপাদিত দুধ যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
খামারের মালিক বিশ্বজিৎ বনিক দাবী করেন, তার খামারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে গাভী লালনপালন করা হয়। তিনি নিজে জমি লিজ নিয়ে ওই জমিতে ঘাস উৎপাদন করে ডোবা-নালা হতে কচুরিপানা সংগ্রহ করে তার খামারের গরুগুলোকে খাওয়ান। তাছাড়া তার খামারের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক কমলাঘাট নদী বন্দর যেখানে রয়েছে একাধিক খৈল, ভূষি, চালের আড়ৎ। ঐ সমস্ত আড়ৎ হতে উৎকৃষ্টমানের খৈল, ভূষি ও চালের কুঁড়াসহ বিভিন্ন গো-খাদ্য সংগ্রহ করে তিনি তার খামারের গরুগুলোকে খাওয়ান। যার কারণে তার খামারে উৎপাদিত দুধ খুবই উন্নতমানের এবং পুষ্টিকর হয়ে থাকে বলে দাবী তার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকায় বিশ্বজিৎ বনিক ও তাদের যৌথ পারিবারিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে মা ডেইরি ফার্ম নামক গরুর খামারটি। বিশাল খামারের সামনে রয়েছে বড় একটি মাঠ। যার মধ্যে ভ্যানে ভরে রাখা আছে ঘাস ও কচুরিপানা। খামারের ভিতরে মটরের পানির মাধ্যমে গোসল করানো হচ্ছে গরুগুলোকে। তাছাড়া সবসময় খামারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক মটর। প্রায় ৮০ বছর আগে ঐ এলাকার কালু বনিক নিজ বাড়িতে খামার শুরু করেছিলেন। কালু বনিকের ব্যবসায়ী বন্ধু সদর উপজেলার চরমশুরা গ্রামের জালাল উদ্দিন ভূইয়ার বাবা মৃত আকরাম আলী ভূইয়া প্রায় ৮০ বছর আগে একটি গাভী কালু বনিককে উপহার দিয়েছিলেন। সেই উপহারের গাভীটি লালনপালন করতে শুরু করেন কালু বনিক। সেই উপহারের গরু হতে একে একে জন্ম নিতে শুরু করে বেশকিছু গাভী। প্রায় ৩০ বছর আগে কালু বনিক মারা গেলে তার পরিবার ধরে রেখেছে গাভী লালনপালন। কালু বনিকের ঘরোয়া পরিবেশে বাড়িতে লালনপালন করা গরুগুলোকে প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নত জাতে গাভীতে রুপান্তরিত করে গড়ে তোলা হয়েছে মা ডেইরী ফার্ম নামের উন্নতমানের খামার। যেখানে এখন গরুর সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিক এবং এদের মধ্যে দুধ দেয় প্রায় ৮০টি গাভী। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৭/১৮ জন মানুষের। খামারটির ভিতরে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বেশকিছু লোক। মটরের তোলা পানিতে সবসময় ঝকঝকে চকচকে রাখা হয় খামারটিকে।
খামারের মালিক বিশ্বজিৎ বনিক বলেন, আমাদের খামারে থাকা গরুগুলোর বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। আমি সবসময় নেচারাল খাবার খাওয়াই। তাই আমার খামারের গরুগুলোর দুধ খুব ভালো। আমার খামার হতে এলাকার লোকজন দুধ নিতে আসে। আমাদের খামারের দুধ মিরকাদিমের বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ স্থানীয় গোয়ালরা নিয়ে যায়। তাছাড়া ঢাকায়ও বিক্রি হয়। রোজার মধ্যে আমি আমার এলাকার সবাইকে ১/২ কেজি করে দুধ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। আমার বাবার যখন ২০/২২ বছর তখন আমার বাবাকে একটি গাভী উপহার দিয়েছিলেন তার বন্ধু। বাবা ছোট পরিসরে খামারে গরু লালনপালন শুরু করেছিলেন। আমি বাবার রেখে যাওয়া গরুগুলো বিক্রি করিনাই। ধীরে ধীরে বাবার রেখে যাওয়া গরুগুলো হতে খামারটি গড়ে তুলেছি। আমার খামারে এখন দুধ দেওয়ার ৮০টি গরু রয়েছে। প্রতিটি গরুকে আমরা দুইবেলা দুধ দোহন করি। দুইবেলায় প্রতিটি গরু ১৪/১৫ কেজি দুধ দেয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন বর্তমানে আমার খামারে সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ মণ দুধ হয়। কিন্তু বর্তমানে দুধের দাম কম। ৪০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছি। আমার খামারের ঘাস আনা, দুধ দোহন করা সবমিলিয়ে ১৭/১৮ জন শ্রমিক আছে। প্রতি শ্রমিককে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেই। সবমিলিয়ে এখন আমার মাসে ৩/৪ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে দুধের দাম সবসময় এতো কম থাকেনা। আশা করি অচিরেই দুধের দাম বাড়বে। তাহলে লোকসান গুনতে হবেনা।
মিরকাদিমে উপহারের এক গরুর খামারে এখন ২শ গাভী ; উৎপাদিত দুধ যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে
আগের পোস্ট