আড়িয়ালবিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং গজারিয়ার সাথে মুন্সীগঞ্জ
সদরের সংযোগ সেতু বাস্তবায়ন এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবী
এমকে টিভি রিপোর্ট : মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সি.সহ-সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজের সম্পাদক মোহাম্মদ আরফিনের কথা হয় সমস্যা ও সম্ভাবনাময় মুন্সীগঞ্জ নিয়ে। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো :
মুন্সীগঞ্জের সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জেলা। ঐতিহাসিকভাবেই এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে আছে। দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর দ্বারা পরিচালিত।
মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু এবং মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের হাইওয়ে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এজন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ।
আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির পক্ষ থেকে তিনি মানববন্ধন, মত বিনিময় সভা এবং প্রেসক্লাবে মিটিং করেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, সেই সময়ের মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ সবাইকে নিয়ে বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য মিটিং করেছেন।
ফতুল্লা থেকে মুক্তারপুর যাওয়ার রাস্তার বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তা সরু থাকার ফলে প্রায় সময় এখানে যানজট লেগেই থাকে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে রাস্তায় ট্রাক চলাচল বেশি হয়। যার ফলে অধিকাংশ সময় ট্রাক দিয়ে রাস্তা বøক থাকে। এমনকি শুক্রবারও এক ঘন্টার পথ যেতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লেগে যায়। পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর যাওয়ার রাস্তাটির সংস্কারের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ সদরের সাথে গজারিয়ার রাস্তা তৈরী করা এবং মেঘনার উপরে ব্রিজ তৈরীর ব্যাপারে তিনি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দিতে বলেন। মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
মুন্সীগঞ্জে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ নেই। সদরে মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করার দাবী জানান তিনি। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকার দাবী জানান।
বর্তমান সংসদ সদস্য এড. মৃণাল কান্তি দাস এবং গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি মুন্সীগঞ্জের কাগজের সম্পাদক মোহাম্মদ আরফিনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর তৈরীর ব্যাপারে মোহাম্মদ আরফিন দীর্ঘদিন যাবত থেকেই চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন, মিটিং, মতবিনিময় সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনমত তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ সদরের সাথে গজারিয়ার সংযোগ সেতুর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নৌকা, ট্রলারে যাতায়াত খুবই কষ্টকর এবং প্রতিবছর এখানে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। এখানে সেতু নির্মিত হলে শুধু মুন্সীগঞ্জবাসীই উপকৃত হবেনা পাশাপাশি উত্তদক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরাও উপকৃত হবে। ঢাকার যানজটও অনেকটা কমে আসবে। সেতুটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার জোর দাবী জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ইন্দ্রিরা রোডে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির ভবনটি ১৪ কাঠা জমির উপর নির্মিত। এখানে একটি দোতলা ভবন রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৮৫ জন ছাত্র আছে। মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য সুযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি এবং ভবনটি সংস্কার করার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহŸান জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জে সন্ত্রাস এবং মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু মুন্সীগঞ্জেই না বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে মাদক ছড়িয়ে গেছে। তার মতে, সন্ত্রাসের চেয়ে মাদকই বেশি। তিনি মাদকের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন মাদকের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে এবং ছেলেমেয়েদেরকে সচেতন করে তুললে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তিনি বিভিন্ন সংগঠনকে মাদক নির্মুলে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।
তার পারিবারিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের রামপালে। রামপাল স্কুলে পড়াশোনার মধ্য দিয়েই তার শিক্ষা জীবন শুরু। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে তিনি আই.এস.সি পাশ করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.এস পাশ করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ডাক্তারি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
ব্যক্তি জীবনে তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তার বড় মেয়ে এবং মেয়ের জামাই দুজনেই ডাক্তার। মেজ মেয়ে এবং মেয়ের জামাই কানাডা প্রবাসী এবং দুজনেই পেশাগত জীবনে ইঞ্জিনিয়ার।
ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একজন বড় মাপের মানুষ। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এলাকার উন্নয়ন করার পাশাপাশি দেশের মানুষের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার তিনি তার জন্মস্থানে যান এবং সেখানে তিনি গরীব, অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।