নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের চরমুক্তারপুরে অভিনব কায়দায় মাদক বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ করলেও কমছে না মাদক বিক্রি। সামাজিক আন্দোলনে ভাটা পড়ায় বাড়ছে মাদক বিক্রি এমনটাই ধারনা বিশিষ্টজনদের। পুলিশ-প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে মাদকের আনাগোনা। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। একসময় শুধু গাঁজার রাজত্ব ছিলো এখানে। গাঁজার পাশাপাশি এখন ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার দেখা মিলছে চরমুক্তারপুরের অলি-গলিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, রাত ৮টার পর মুক্তারপুর সেতুর উপর মাদক কেনাবেচা হয়। গত ১ মাসে পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকা থেকে বাক্কার মিয়া, বাবু, মোজাম্মেল, হাসান মন্ডল গাঁজাসহ আটক হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে তাদের আটক করা হয়। গত ১ মাসে মাদকের মামলা হয়েছে অর্ধশত। তারপরও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। এই ব্যবসার মূল হোতারা রয়েছে আড়ালে। তাদের টার্গেট যুবসমাজ।
চরমুক্তারপুর একটি শিল্পনগরী এলাকা হওয়ার কারণে এখানে বিভিন্ন জেলা বা অঞ্চল থেকে মানুষ চাকরি বা ব্যবসা করতে আসে। স্থানীয় ও বহিরাগত মিলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে। আর এই সুযোগ নিয়ে এলাকার মাদকচক্র গড়ে তুলেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। নারায়ণগঞ্জের শেষ ও মুন্সীগঞ্জের প্রথম বর্ডার হওয়ার কারণে চরমুক্তারপুর এলাকাটি মাদকের বর্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদক প্রতিরোধ নিয়ে সবাই ভাল ভাল কথা বলে দায় এড়িয়ে যায়। তবে বাস্তবে এর কোন ফল পাওয়া যায় না। সদর উপজেলার উপকন্ঠ চরমুক্তারপুরে এখন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে। জানা গেছে, এখন গাঁজা-ফেন্সিডিল ও বিয়ারের পাশাপাশি হরদম চলছে মরণ নেশা ইয়াবা। এই ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে ভাল ভাল পরিবারের সদস্যরা। তাই স্থানীয়রাও ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন না। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্প বয়সী। যারা মাদকের ব্যবসায় জড়িত তাদের দেখে হঠাৎ কেউ বিশ্বাস করবে না তারা এই ব্যবসায় জড়িত কারণ এরা সবাই ভাল পরিবারের সন্তান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মাদকের ভয়ানক থাবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের আল্পবয়সী ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। তাদের মতে, নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে বাড়ছে মাদক সেবনকারীর সংখ্যাও। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক তুলে দিচ্ছে উঠতি বয়সী যুবকদের হাতে। যার মধ্যে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। মা-বাবার চোখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে যুবক ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নিবে অভিভাবকেরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকেরা। যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা অবগত আছি। স্থানীয়দের মাদকের ব্যাপারে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। আমরা মাদক নির্মূলে দ্রুত একটি সাঁড়াশি অভিযান চালাবো। মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই। খোঁজ পেলেই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হবে। মাদকের ব্যাপারে কঠোরভাবে মাঠে কাজ করছি। যেকোন মাদক ব্যবসায়ীকে পাওয়া মাত্রই আটক করা হবে।
মুন্সীগঞ্জের চরমুক্তারপুরে অভিনব কায়দায় মাদক বিক্রি, টার্গেট যুবসমাজ
আগের পোস্ট