নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের দশকানি গ্রামের মোল্লা বাড়ির আবু তালেবের মেয়ে মুন্নী পঞ্চসার ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ বাপের বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পারিবারিক যন্ত্রণায় মুন্নী কি আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে এখন সবমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মুন্নীরা তিন বোন ও দুই ভাই। মুন্নী সবার ছোট বোন। ইতোমধ্যে দুই বোন ও দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাই প্রবাসে থাকেন। মুন্নীরা অর্থবিত্তে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। মুন্নীর স্বামী হচ্ছে আকাশ। আকাশ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের এইচএসসি’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আকাশ একই ইউনিয়নের ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের সিরাজের ছেলে। আকাশরা অর্থনৈতিকভাবে মুন্নীদের তুলনায় একটু নিচের দিকে বলে আকাশের শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা আকাশকে বাঁকা চোখে দেখতেন বলে শোনা যাচ্ছে। আকাশ মুন্নীর বিয়ের পর আকাশকে সেইভাবে মুন্নীর পরিবার মর্যাদা দেয়নি বলে জানা গেছে।
মুন্নী ও আকাশ প্রেম করে দেড় মাস আগে বিয়ে করে। তারা উভয়েই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তাদের বিয়ে হলো তা নিয়ে সকল মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে উভয়ের প্রেমের বিয়ের কারণে দুই পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইতোমধ্যে তাদের কাবিন করেন বলে শোনা যাচ্ছে। যা আইনত সঠিক নয় বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এদিকে এসব আইনি জটিলতার কারণে মুন্নীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশের হাতে তুলে দেয়নি মুন্নীর পরিবার এমনটি শোনা যায় মুন্নীর মৃত্যুর পরে। এক্ষেত্রে মুন্নীর পরিবারের দাবি হচ্ছে মুন্নী আগামী দুই বছর পর প্রাপ্তবয়স্ক হবে। তখন মুন্নীকে আকাশের হাতে তুলে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ কারণে মুন্নী বাপের বাড়িতেই থেকে যায় বলে একাধিক সূত্রমতে জানা গেছে। আর এটিই মুন্নীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আকাশের সাথে মুন্নীর বিয়ে তার প্রবাস দুইভাই কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এর মূল কারণ হচ্ছে আকাশ ও মুন্নীর পরিবার অর্থনৈকিভাবে আকাশ পাতালের মতো। মুন্নীকে চাপ প্রয়োগ করা হয় আকাশকে ভুলে যেতে। কিন্তু মুন্নী আকাশকে কোনভাবেই ছাড়তে রাজি হয়নি। এদিকে মুন্নী আকাশের কারণে তার দুইভাই এখানে সংসার খরচপাতি বন্ধ করে দেয় বলে শোনা যাচ্ছে। এ কারণে মুন্নীকে তার ভাইয়ের বউরা নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিত। এ কারণে মুন্নী আত্মহত্যা করতে পারে বলে একাধিক মহল মনে করছেন। তবে কাউকে আত্মহত্যার পথে ধাবিত করলে সেখানে যারা এ বিষয়ে দায়ী থাকবেন তারা সমভাবে অপরাধী হবেন বলে বিজ্ঞ আইনজীবীরা মনে করছেন। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে মুন্নী যে ঘরের ভেতরে ফ্যানের সাথে ঝুলেছিল বলে বলা হচ্ছে তা মুন্নীর ঝুলন্ত দেহ শয়নকক্ষের খাটের সাথে হাঁটু ভাজ করে লেগেছিল। তাহলে সে কিভাবে আত্মহত্যা করলো। এভাবে কোনমতেই আত্মহত্যা করা যায় না। তাছাড়া ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত ফাঁসির কাপড়ের গিট ও গলার গিটের মধ্যে অনেকটাই তফাৎ খুঁজে পাওয়া যায়। তাই মুন্নীর দেহ ময়নাতদন্ত করা জরুরী ছিল। অথচ কোন ধরণের ময়নাতদন্ত ছাড়াই মুন্নীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত হত্যাকারীকে আড়াল করা হয়েছে। এদিকে অনেকের অভিযোগ হচ্ছে যে, মুন্নীকে হত্যা করে পরে হত্যাকারী তার দেহ ফ্যানে ঝুলিয়ে নাটক করছে। সাধারণত ফাঁসিতে ঝুলনো লাশের জিহ্বা বের হবে বলে ডাক্তারি মতে অভিমত প্রকাশ করছেন অনেকেই। এখানে সেইরকম কোনো আলামত লক্ষ্য করা যায়নি।
মুন্নীর বাবা আবু তালেব জানান, এ রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো দেখে তিনি শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেন। এরপর তিনি মুন্নীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। কিন্তু সাংবাদিক এবং এলাকাবাসীরা দরজা ভাঙ্গার কোনো চিহ্ন বা প্রমাণ দরজার মধ্যে দেখতে পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মেয়ের মা ও খালা এবং স্বজনদের অভিযোগ হচ্ছে মুন্নীকে প্রথমে হত্যা করে পরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ঝুলন্ত মুন্নীর পা দুটো খাটের ওপরে প্রায় এক ফুটের মতো লেগেছিল। সাধারণ আত্মহত্যা করলে পা দুটো ওপরে ঝুলানো থাকতো বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। আর মুন্নীর মৃত্যুর খবর যখন শুনা যাচ্ছিলো সেসময় মুন্নীর মা পাশের গ্রামের কাশিপুর একটি দাওয়াতের অনুষ্ঠানে ছিলেন বলে তার পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে। মুন্নীর মা এবং স্বজনরা বলেন, মুন্নী ও তার স্বামী আকাশের সাথে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তার মামা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এদিন ফিরে আসেন। এদিকে মুন্নী ঢাকার উকিলশ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার বাড়ি থেকে তাকে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে। আর গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পড়ে বিকেল ৩টার সময় আকাশ মুন্নীকে বিরিয়ানি খাবার দিয়ে আসেন ঠিক সেসময় ও মুন্নী আর আকাশের মধ্যে কথাবার্তা হাসি আনন্দ চলছিলো বলে জানা গেছে। তাহলে মুন্নী নিজে আত্মহত্যা করতে পারে না বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এ হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতো বলে অনেকেই মনে করছেন। তাই মুন্নীর মৃত্যু ঘিরে এখন রহস্যের ঘুরপাক খাচ্ছে এবং মুন্নীর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।