নিজস্ব প্রতিবেদক
নদীর এ পাড় ভাঙ্গে ও পাড় গড়ে এই তো নদীর খেলা। ভাঙ্গা আর গড়ার মাঝে জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকে নদীর পাড়ের মানুষেরা। মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের দিঘীড়পাড় থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কবরস্থান ও হাটবাজার ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক কৃষক জমি ও আবাদকৃত ফসলাদি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন কবলিত পুরো এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে শিলই ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনের মুখে থাকা মানুষগুলো অজানা এক আতঙ্কে রয়েছে। কেউ কেউ নিজেদের রক্ষায় নতুন ঠিকানা খুঁজছে। কেউ আবার ফসলি জমি হারিয়ে ভিটেমাটি রক্ষায় করণীয় নিয়ে ভাবছে। কথা হয় ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ শিলই গ্রামের আমিন হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার প্রায় ২০ শতাংশ জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। জমিতে বছরে প্রায় পাঁচটি ফসল হতো। বর্তমানে সবজি চাষ করেছিলাম। এ জমির ফসলের আয়েই আমার সংসার চলতো। বাকি জমিটুকু ভেঙ্গে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাবো।
ভুক্তভোগী জান শরীফ জানান, গতবছর আমার জায়গার কিছুটা অংশ ভেঙ্গে যায়। এ বছর পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। চাষাবাদ করার মতো কোন ব্যবস্থা নেই। ভেঙ্গে সবকিছু ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে গেছে। দুমুঠো ভাত যে খাবো সে ব্যবস্থা বর্তমানে নাই।
শিলই এলাকার সমাজসেবক জাকির জমাদ্দার বলেন, ভাঙ্গনে মানুষের সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকায় যারা জনপ্রতিনিধি আছে তারা যেন এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন। এমপি মহোদয় ও শিলই চেয়ারম্যান এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে যেন ভূমিকা রাখেন এটাই প্রত্যাশা। এলাকার জনগণ যাতে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারেন সেটি আমি প্রত্যাশা করছি। তবে ভাঙ্গন এলাকাটিতে যদি জিও ব্যাগ ফেলা হয় তাহলে ভাঙ্গন রোধ হবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে শিলই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটন বলেন, শিলই ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম আমার ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উপমন্ত্রীর মাধ্যমে কিছু জিও ব্যাগ ইতোমধ্যেই ফেলানো হয়েছে। বাকি ভাঙ্গন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা পওর বিভাগ-১ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, বসতবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাটবাজার, স্কুল, কলেজ, কবরস্থান রক্ষার্থে আমাদের জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে আমাদের কাজও চলছে। ঢাকা পওর বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে কিছু জিও ব্যাগ ফেলবো। তবে পুরো এলাকা জিও ব্যাগ ফেলা সম্ভব হবে না।