নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বন্যায় দিশেহারা বানভাসীরা। পানিবন্দি হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অনেক স্থানে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মুন্সীগঞ্জের ৪টি উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় লৌহজং, শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরসহ ৪টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে শ্রীনগরের ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। আরও একাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তায় পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এই বন্যার ফলে হাজার হাজার মানুষ যেমন পানিবন্দি হচ্ছে সেই সঙ্গে ডুবে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় মুন্সীগঞ্জে প্রায় আড়াই হাজার পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক মৎস্য চাষী। হঠাৎ বন্যায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি গবাদিপশু ও হাঁস মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে গতকাল বন্যায় প্লাবিত মানুষের সার্বিক অবস্থা দেখতে এলাকা পরিদর্শন করেন লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান। লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নে হাড়িদিয়া গ্রামে সিকদার মৎস্য প্রকল্প মিতু সিকদার ও আকরাম শেখ বলেন, আমাদের মালিকানাধীন ও ভাড়া নেয়া ফিশারিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় পঞ্চাশ হাজার নতুন পোনামাছ এবং পুকুরে পাঁচ হাজার বড় সাইজের পুরাতন মাছ ছিল। সকাল এবং বিকাল হলে সব পুকুর জুড়ে পোনা মাছ ভাসত, খেলা করত, খাবার খেত, কত সুন্দর লাগত। বেড়া দিয়ে শত চেষ্টা করেও পোনাগুলো রাখা গেল না অকাল বন্যার কারণে। মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার ৯৫৭টি গ্রামের মধ্যে পাঁচশোরও বেশি গ্রামবাসীর দুর্ভোগ প্রতিদিনই মাত্রা ছাড়াচ্ছে। ডুবে যাওয়া বসতবাড়িতে তাদের দিন কাটছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মায় তীব্র ঘূর্ণায়মান স্রোতের তোড়ে ভাঙন তান্ডব চলছেই। ইতোমধ্যে লৌহজংয়ের হলদিয়া গ্রামের জামে মসজিদের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন তান্ডব অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী গ্রামবাসী এখন আতঙ্কে দিনযাপন করছে। লৌহজং উপজেলা প্রশাসন সূত্র মতে, উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লৌহজংয়র বেজগাঁও, গাঁওদিয়া, কলমা, কনকসার, হলুদিয়া ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি পদ্মার ভাঙনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে গতকাল রোববার পর্যন্ত পদ্মা নদী সংলগ্ন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল-বানারী ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নসহ ৪টি ইউনিয়নের আড়াইহাজার পবিবার পনিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কামারখাড়া হাসাইল ভাঙ্গুনিয়া পয়েন্টে ২টি সেতুর সংযোগ সড়কের একাংশ বিলীন হওয়ায় দিঘীরপাড়-কামারখাড়া-হাসাইল সড়ক দু’টি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল, রাঢ়ীখাল ও বাঘড়া ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রাম পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় বন্যা কবলিত হয়ে শত শত পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।