নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের অন্তত ৪০ বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের খাসকান্দি ও ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামে এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানায়, আধিপত্য বিস্তার ও পুরনো বিরোধকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে ৪০টি বাড়িঘর ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগ উভয়গ্রুপের। এসব ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো। ঘটনাস্থলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিগত এক বছর যাবত সামসুদ্দিন হাওলাদার (মামুন) ও নজির হাওলাদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে একবছরে গ্রুপ দুটি এই পর্যন্ত ৮ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে নিরীহ মানুষের বাড়ীঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে শত শত ককটেল। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
একপক্ষের ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী আহম্মদ হাওলাদার বলেন, আমি গ্রামে নেই ঢাকাতে অবস্থান করছি, মারামারির সাথেও জড়িত না। তারপরেও প্রতিপক্ষ সামসুদ্দিন হাওলাদারের লোকজন আমার বালু কাটার ড্রেজারটি ভেঙ্গে মেশিন ও পাইপ লুট করে নিয়ে গেছে। এতে আমার ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ শাহিদা বেগম বলেন, আমার ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী। দেশে থাকেনা, কোনো দলবলেও নাই। রাতে একদল সন্ত্রাসীরা গ্রামে হামলা চালিয়ে ভাইয়ের বাড়ীঘরে ভাংচুর চালায়।
বাকপ্রতিবন্ধী আসাদ হাওলাদারের স্ত্রী তারা বানু বলেন, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। দিনমজুরের কাজ করে খাই। রাতে নজির হাওলাদারের লোকজন হামলা চালিয়ে আমাদের ঘরের দরজা, বেড়াসহ ঘরের ভিতরের আসবাবপত্র ভাংচুর চালিয়েছে। আমার স্বামী তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছে তারপরেও ভাংচুর থামেনি।
হামলার বিষয়ে নজির হাওলাদার বলেন, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে মামুন হাওলাদারের নির্দেশে ৫০/৬০ জনের একটি দল ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে আমাদের লোকজনদের বাহির করে দেয়। খাসকান্দি ও ছোট মোল্লাকান্দির গ্রামের অন্তত ৫০ বাড়ি ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়। আমাদের পক্ষের আহমেদ হাওলাদারদের ড্রেজার মেশিন লুটপাট করে। পরে সন্ধ্যায় দুইপক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। এসময় ফারুক বেপারী (৩৫), শাকিল হাওলাদার (২৫), নূর ইসলাম হাওলাদার (২০) আহত হয়েছে। আমাদের লোকজন গ্রামছাড়া রয়েছে। বাড়িতে নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
অপরদিকে আইনি সহায়তা চেয়ে সামসুদ্দিন হাওলাদার (মামুন) বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নজির হাওলাদারের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। তারা রাতের আঁধারে আমার বাড়ীসহ গ্রামে আমার ১৫ জন সমর্থকের বাড়ীঘরসহ অন্তত ৪০ বাড়ি ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট করে। এবং ককটেল ফুটিয়ে আমার বাড়ীর দাড়োয়ানসহ ৫ জনকে আহত করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। তবে এখানে বাড়িঘর ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৪০ বাড়ি ভাংচুরের ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন
আগের পোস্ট