নিজস্ব প্রতিবেদক
দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত সব ভুলে, ভোরে মোরগ ডাকার আগেই হকার ছুটে আসেন সংবাদ এজেন্টের কাছে। সেখান থেকে দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে আবার ছুটতে শুরু করেন গ্রাহকের দুয়ারে। দেশ, সমাজ, বিশ্বের খবর মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যেন তাদের ব্রত। কিন্তু তাদের খবর আমরা কতটুকু রাখি? তারা থেকে যান অগোচরে। মানুষের অধিকার আদায়ের সংবাদ বিলি করলেও তারা নিজেরা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ তারা খবরের কাগজের সম্পাদক ও পাঠক উভয়ের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। সমাজে ‘হকার’ নামেই তাদের পরিচয়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মো. সেন্টু মিয়া, জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন পত্রিকা হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা। সেই ভোর রাত থেকে তারা পথে নামেন। সারাদিনের পরিশ্রমের ফল সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। পত্রিকা যেদিন ভালো বিক্রি হয় সেদিন ৪০০ টাকা আয় হয়। পরিবার, পরিজন ও সন্তান লালন-পালন, তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ আবাসন ব্যয় মিটিয়ে উপজেলা শহরে তাদের টিকে থাকা কঠিন। জীবন বাজি রেখে খবরের কাগজ তারা পৌঁছে দেন ঠিকই কিন্তু দুর্ঘটনায় তাদের পাশে কেউ দাঁড়ান না বলে মন্তব্য করেন তারা। গজারিয়া উপজেলার ওসমান পত্রিকা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে পাঠক অনলাইনে সব সংবাদ আগেই দেখে ফেলে তাই পেপার কম চলে। সব মিলিয়ে পেপার বিক্রিতে মন্দাভাব যাচ্ছে। এজন্য পাশাপাশি অন্য ব্যবসা করতে হয়। এটা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব না। এই আয় দিয়ে আসলে একজন মানুষের চলা মুশকিল। তার উপর পরিবার নিয়ে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার। কিন্তু কোনো উপায় নেই। জুয়েল হকার জানান, নিজের সামান্য আয়ে কোনোরকম চলছে পরিবার। যেদিন অসুস্থ থাকি সেদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হয়। পাঠক অসুস্থতার কথা মানতে চায় না। পত্রিকা থেকে কোনো খোঁজখবর রাখে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজখবর রাখে না এবং কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজকাল কেউ কারো খবর রাখে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। এখন তো আবার করোনা ঘর থেকে বের হয় না অনেক মানুষ। তাদের পত্রিকা বাড়ির ভিতরে জানালা বা দরজা দিয়ে দিতে হয়। সব মিলিয়ে এখন পেপার বিক্রিতে ধস নেমেছে।