নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে চলমান বন্যায় এলজিইডি’র বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক সেতুর এপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গেছে। এর ফলে সেখানকার যোগাযোগ ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্যার পরে এখানে নতুন বরাদ্দ পাওয়া গেলে এসব কাজের পুনঃসংস্করণ করা হবে বলে মুন্সীগঞ্জের এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে। তখন এ পথে স্থানীয় এলাকাবাসী চলাচল করতে পারবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জেলায় ৬টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলায় বন্যায় প্রাথমিকভাবে এ মুহূর্তে ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এর মধ্যে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জেলার এলজিইডিতে আসেনি বলে সূত্রমতে জানা গেছে। মুন্সীগঞ্জের এলজিইডির দাবি হচ্ছে টঙ্গীবাড়ীর হিসাব নিকাষ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমরা সেই হিসাব পেয়ে যাবো। তবে অনুমান করা হচ্ছে যে সেখানকার ক্ষয়ক্ষতিসহ জেলায় এবারের বন্যায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল হাসান জানান, এবারের বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ও পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যায় মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলায় প্রায় ৪৯টি সড়কের ৭৫ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানির চাপে এসব সড়কের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি ইতোমধ্যে রাস্তা থেকে নেমে যেতে শুরু করেছে। আর পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে রাস্তার ক্ষতবিক্ষত অংশ এখন ভেসে উঠছে। সেখানে খানাখন্দ রাস্তা এখন সবার চোখে পড়ছে। খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে এ পথে এলাকাবাসী কোনভাবেই বর্তমানে চলাচল করতে পারছে না বলে শোনা যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, চলমান বন্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৫ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার সড়ক পথের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে এখানে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা ব্যতীত ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২টি সড়কের ৪৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখানে হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সিরাজদিখান উপজেলায় চারটি সড়কের ২২ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। শ্রীনগর উপজেলায় আটটি সড়কের ১৮ দশমিক এক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গজারিয়া উপজেলায় ছয়টি সড়কের ২৩ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লৌহজং উপজেলায় পাঁচটি সড়কের ১০ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ১৩টি সড়কের ৪৮ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল হাসান আরো বলেন, প্রথম দফায় ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় স্থানীয়ভাবে আরেকটি ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করা হচ্ছে। সেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি জানান, সব মিলিয়ে এ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। বন্যার পানি পুরোটা সরে গেলেই চূড়ান্ত হিসাব দেখানো যাবে বলে এলজিইডির এ নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।