নিজস্ব প্রতিবেদক
এবারের চলমান বন্যায় মুন্সীগঞ্জে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় সোয়া ২৪ কোটি টাকার মতো। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় এ ক্ষয়ক্ষতির সাথে জড়িত কৃষকদের মাঝে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে দুস্থ প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সাহায্যে প্রদান করা হচ্ছে বলে মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় একাধিক ফসলের ওপর কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধমে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো প্রণোদনার টাকা তৃতীয় দফায় প্রদানের জন্য প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও শোনা গেছে। বন্যায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ইতোমধ্যে একাধিক দফায় কৃষকদের মাঝে এ প্রণোদনার টাকা প্রদান করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া এ প্রণোদনার টাকা দিয়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আবারো কৃষিকাজে মাঠ পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে সেইজন্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এ আর্থিক সাহায্য প্রদান করছেন বলে সূত্র মতে জানা গেছে। এ প্রণোদনার টাকা পেয়ে দুস্থ কৃষকরা আবারো কৃষি কাজে নিজের মনোযোগ নিবেশ করেছে বলে একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে। কৃষকরা এখন কোমর বেঁধে কৃষিকাজে মাঠে নেমে পড়েছেন ইতোমধ্যে। এখন উঁচু জমিতে কৃষকরা কৃষিকাজের জন্য দিনভর কাজ করছেন। এদিকে বন্যার পানি উঁচু জায়গা বা জমি থেকে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। আর সেখানটাতে কৃষকরা কৃষিকাজের জন্য জমির পরিচর্যার কাজ শুরু করেছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৬৫টি ইউনিয়নে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দের প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম দফায় প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ৩২ জন দুস্থ কৃষক এ প্রণোদনার টাকা পেয়েছে বলে জানা গেছে। প্রথম দফায় পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি বাগানের জন্য এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৮শ’ টাকা। এখানে ভাসমান বীজের বীজতলা তৈরির জন্য এ জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। এখানে ৮০টি বীজতলা তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। এখানে ৮০ কেজি ধানের বীজতলা তৈরি হবে বলে সূত্র মতে জানা গেছে। এ প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। পরবর্তী প্রণোদনায় ২শ’জন কৃষকের মাঝে দুই ধরণের প্রকল্পের ১২ লাখ ৫০ হাজার ৭শ’৬৪ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে লাউ শাক, পালং শাক, ডাঁটা শাক, মুলা শাক ও কলমি শাক। মেয়াদী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, শশা, বরবটি, শিম, মরিচ ও বেগুন। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে দুস্থ কৃষকদেরকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করছেন। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ জেলায় এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলমান বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলায় বন্যার পানির কারণে এ সময়ের মৌসুমী ফসলের বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি পানিতে তলিয়ে যায়। এর ক্ষতির পরিমাণ ২৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এবারের বন্যায় কৃষি কাজ করে ১৩ হাজার ৯শ’৩৩ জন কৃষক সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ বিষয়টি চূড়ান্ত হিসাবের নির্ণয় করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ক্ষতির কারণে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। এদিকে মুন্সীগঞ্জের বাজারে নানা রকমের সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে স্থানীয় বাজারে সকল ধরণের শাক সবজির দাম চড়ায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ শাক সবজি প্রকারভেদে চড়া দামের মধ্যে ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজারে কচু, শাপলা, সেঁচি শাক ও কলমি শাকের ব্যাপকতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ জমিজমা নিচু এলাকায়। সেই কারণে এখানকার বেশির ভাগ ফসলাদি বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জের বাজারে অন্য জেলা থেকে আনা শাক সবজি দিয়ে এখানকার চাহিদা বর্তমানে পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সবজির চড়া দামের কারণে কেনাকাটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। গ্রামগঞ্জের মানুষের নিত্য দিনের খাবারের পাতে বর্তমানে শাপলা, সেঁচি শাক ও কচু দিয়ে আহার করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।