নিজস্ব প্রতিবেদক
নোভেল করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্য দিয়ে নানাবিধ দুশ্চিন্তা আর হতাশায় দিন কাটাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। ছোট খাটো চায়ের দোকানি, দিন মজুর, শ্রমিক, জেলে, কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিক, হকার, সর্বোপরি দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বেঁদে সম্প্রদায়, হিজড়া, দুস্থ, অসহায়, ভূমিহীনসহ বহু জনগোষ্ঠীর বসবাস মুন্সীগঞ্জ জেলায়। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার ইছামতি নদীর তীরে ১৩০টি বেঁদে সম্প্রদায়ের বসবাস। বহু বছর ধরে তারা এখানে বসবাস করে। নদীতে মাছ ধরা, নারীরা সাপ খেলা দেখানো, সিরামিক, থালাবাসন বিক্রিসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবন জীবিকা চালাতো। করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের রুজি রোজগার। জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া খাদ্য সহায়তায় তারা ১৫ দিন চলে ভালোই। আগামী দিনগুলোতে তারা কিভাবে চলবে তাদের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির নানা অভিযোগ তাদের। পাশাপাশি ধনী বা পয়সাওয়ালা লোকগুলোর বাজার করার হিড়িক পড়ে শহর এবং গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে। প্রতিদিনই বাজারগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা। ২/৩ মাসের বাজার কিনে দেশে কৃত্রিম খাদ্য সংকট করেই চলছে। দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও বেপরোয়া মানুষগুলো প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবেই তারা নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য কিনে মজুদ করেই চলছে।
অন্যদিকে জেলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে সেগুলো সুষ্ঠু বন্টন হলেও বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা এবং রাজনৈতিক নেতাদের দেয়া ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিয়ে মানুষের অভিযোগ রয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের অভিযোগ হলো শহর, গ্রাম এবং পাড়া মহল্লায় যেভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে সেটা হলো অনেকটা লোক দেখানো। স্বজনপ্রীতি আর মুখ চিনে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। যাদের ত্রাণ সহায়তা পাওয়া জরুরি তারা পাচ্ছেনা। অথচ যাদের পাওয়ার কথা না তারা ২/৩ বার পেয়েছে খাদ্য সহায়তা। তাছাড়া করোনার কারণে কর্মহীন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকগুলো কাজে না যেতে পেরে অর্থের অভাবে পড়েছে। অর্থের অভাবে নানাবিধ সংকটে পড়ছে তারা। সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছে বলতে পারছেনা তাদের অভাব অনটনের কথা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, সরকারী /বেসরকারী খাদ্য সহায়তার মধ্যে চাল, ডাল, তেল, লবন, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, সাবান ও আটা। কোথাও কোথাও নিম্নবিত্তরা পেয়েছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক কীটনাশক। যেসব এলাকায় এখনও প্রকৃত দিন মজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষগুলো সরকারী/ বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা পায়নি সেইসব এলাকার নামগুলো কিছু অংশ দেয়া হলো। শহরের উত্তর ইসলামপুর, দক্ষিণ ইসলামপুর, খালইষ্ট, গোয়ালপাড়া, মাঠপাড়া, রমজানবেগ, পূর্ব মীলমন্দি, মানিকপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেও নিম্ন আয়ের মানুষ আজও পায়নি খাদ্য সহায়তা।
মিরকাদিমের একাধিক বেঁদে সম্প্রদায়ের লোক জানান, জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া ১৫ দিনের খাবার পেয়েছে তারা। এই ১৫ দিন তাদের খাবার দাবার ভালোই চলছিলো। এখন খাবার শেষ পর্যায়ে। সামনের দিনগুলোতে তারা কি খাবে তাই নিয়ে বেশ চিন্তিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নিম্ন আয়ের মানুষ জানান, ভোটের সময় ভোটের স্লিপ ঘরে ঘরে পৌছানো হয়। এখন কাজ নেই, অর্থ নেই। ঘরে বসে করোনার আতঙ্ক নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। এখন কেন সরকারী / বেসরকারী খাবার সামগ্রী পাইনা। এখন দেশের এই দূর্যোগ সময়ে জনগনকে বাঁচান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহাম্মেদ,বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ সহায়তা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বেঁদে সম্প্রদায়, শহর, গ্রামাঞ্চলের কর্মহীন এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে সরকারী ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেয়া হয়েছে। যতোদিন এই কোভিড ১৯ এর দূর্যোগ থাকবে ততোদিন কর্মহীন এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে। সরকারী ত্রাণ সহায়তা প্রদানে এবং ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রিতে কোন অনিয়ম হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোন নিম্নআয়ের বা মধ্যম আয়ের মানুষ যদি তাদের খাদ্য সঙ্কটের কথা জানায় তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।