আইনি জটিলতা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ থানা ভবনের পিছনে জরাজীর্ণ বাইকের স্তুপ। বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা এসব মোটরগাড়ি এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। থানায় জব্দ হওয়া গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন শুধু নষ্টই হচ্ছে না, আস্ত গাড়ি ক্রমশ মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। জব্দকৃত ওইসব গাড়ির কিছু অংশ মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় মালিক ফিরে পেলেও ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আইনি জটিলতা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত আবুল বাশার জানান, থানায় রাখা গাড়িগুলো মামলার আলামত। আদালতের সম্পত্তি হিসাবে থানায় রাখা হয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে গাড়িগুলো দীর্ঘদিন থানায় রাখতে হয়। জব্দ হওয়া গাড়ি কয়েক মাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য গাড়ির চেয়ে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল ডাম্পিং স্টেশনে আটক রয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাড়ির বেশিরভাগই মরচে ধরে ভেঙে গেছে। মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জব্দ হওয়া গাড়ির মালিককে খোঁজ করা হয়। মুন্সীগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর বলছেন, চোরাই, দুর্ঘটনা কবলিত, কাগজপত্রহীন কিংবা মাদকবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত যানবাহন আটক করে থাকে। এর মধ্যে কিছু গাড়ি আদালতের নির্দেশে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে গাড়ির বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ি কিংবা এর কোনো অংশ যাতে খোয়া না যায় তা নিশ্চিত করতে বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন হয়। জব্দ করা গাড়ির কোনো অংশ যদি খোয়া যায় কিংবা চুরি হয়, তাহলে তার দায়ভার পুলিশের কাঁধেই পড়বে। ফলে জব্দ করা গাড়িগুলো থানার বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি ভালো থাকবে এবং মামলা শেষ হওয়ার পর মালিক সচল গাড়ি পাবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জব্দ করা গাড়ি মামলার আলামত। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ি ব্যবহার করলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া সরকারি কাজে মামলার জব্দ করা গাড়ি ব্যবহার করা হলে মানুষ চরম হয়রানির শিকার হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার পিছনে সেটঘরে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল। এসব মোটরসাইকেল থেকে দামি পার্টস, লাইট খুলে নেওয়া হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুর রায়হান জানান, অবৈধ জব্দ গাড়ির ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনা মেনে আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ এসব গাড়ি অকশনে উঠাবে। তবে প্রক্রিয়াটা সময়সাপেক্ষ। সহজ উপায়ে গাড়িগুলো ব্যবহার করলে গাড়ির ক্ষতির পরিমাণ কমবে। পুলিশের ওপর চাপও কমবে।
জব্দকৃত মোটরসাইকেল নিয়ে মালিকদের কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি থাকবে। এসব গাড়ি পুলিশের কোন সদস্য চাইলেই ব্যবহার করতে পারবেনা। আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ এসব গাড়ি অকশনে উঠলে তখন এটা পুলিশ ব্যবহার করতে পারে। জব্দকৃত গাড়িগুলোর দামি পার্টস, লাইট খুলে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। মালিকবিহীন জব্দকৃত কিছু মোটরসাইকেল অকসনের আগে কেউ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।