নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সারাদেশের মতো মুন্সীগঞ্জ ব্যাংকের শুক্র-শনিবারের ছুটির সঙ্গে রোববারও যুক্ত করা হয়েছে। আর এ কারণে মুন্সীগঞ্জে গতকাল সোমবার ব্যাংক খোলার দিনের শুরুতেই ভিড় লেগে যায়। এই ভিড়ে ব্যাংকের গ্রাহকদের গাদাগাদি করে টাকা তুলতে দেখা যায়। এত ভিড় যে, কেউ কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চেক জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে। সরেজমিনে গতকাল সোমবার মুন্সীগঞ্জ কাচারী এলাকায় সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, লম্বা লাইন। অধিকাংশ গ্রাহকই ছিলো মধ্যবয়সী। গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে চাহিদা মোতাবেক টাকা উত্তোলন করতে। নেই শারীরিক দূরত্ব। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সামাজিক দূরত্বের কথা বললেও শুনছেন না তাদের কথা। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে আসা গ্রাহক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম পেশায় একজন শিক্ষক। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আধাঘন্টা হলো টাকা উত্তোলন করতে এসেছি। লম্বা লাইন দেখে আমি ম্যানেজারের কক্ষে প্রবেশ করলাম। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে টাকা উত্তোলন করলাম। গ্রাহকদের উচিৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে টাকা উত্তোলন করা। ব্যাংকটির এজিএম নূরুদ্দিন বলেন, দূরত্ব বজায় রেখে গ্রাহকদের বলছি টাকা উত্তোলন করতে, কিন্তু বিধি-নিষেধ মানছে না। ব্যাংকের শুক্র-শনিবারের ছুটির সঙ্গে রোববারও যুক্ত করা হয়েছে। তাই সোমবার ভিড়টা বেশী থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে সামাজিক দূরত্ব মানাবার চেষ্টা চলছে আমাদের পক্ষ থেকে, কেউ শুনছেনা। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গত ১ জুলাই থেকে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধের মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকের শুক্র-শনিবারের ছুটির সঙ্গে রোববারও যুক্ত করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা রোববারের পরিবর্তে মঙ্গলবার ব্যাংক বন্ধ রাখার পক্ষে ছিলেন। তাদের যুক্তি টানা তিনদিন ব্যাংক বন্ধ থাকলে গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক বন্ধ থাকলে তেমন সমস্যা হতো না। রোববার ব্যাংক বন্ধ রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, মূলত যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে, সেসব দেশগুলোতে শনি ও রোববার ছুটির দিন। এর ফলে আমাদের দেশের ব্যাংক খোলা থাকলেও রোববার লেনদেন নিষ্পত্তি হয় না। তাই ছুটির জন্য রোববারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা আরও জানান, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশই আমেরিকান ডলারে সম্পন্ন হয়। এরপরই পাউন্ড, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন, চীনের রেনমিনবিতে লেনদেন নিষ্পন্ন হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলো নিষ্পত্তি হয় মূলত বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, দুবাইভিত্তিক মাশরেক, হাবিব আমেরিকানসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রতিটি মুদ্রার লেনদেন নিষ্পত্তিতে নির্দিষ্ট দেশে ব্যাংক খোলা থাকতে হয়। অথচ এসব দেশের ব্যাংকগুলো রোববার বন্ধ থাকে। ফলে বাংলাদেশে কেউ লেনদেন করতে চাইলেও সেই লেনদেন সম্পন্ন হয় না। সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে দেশে রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকলেও বড় কোনো সমস্যা নেই।