নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার বাগমাহমুদালী পাড়ার শাহানাজ বেগম (৬৫) নামের এক নারীকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তারই আপন ভাই মোঃ জয়নাল আবেদীন চুন্নু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে শাহানাজ বেগম তার বসতঘরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য অনুমতি দেয় তার ভাই চুন্নু মিয়াকে। এখন শাহানাজ বেগমের বসতঘরটি প্রয়োজন হলে তার ভাই চুন্নু মিয়াকে ঘর ছেড়ে দিতে বললে ভাইয়ের হাতে হামলার শিকার হোন।
ভুক্তভোগী শাহানাজ বেগম জানান, এই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে আমার উপর সপরিবারে নির্যাতন করছে। আমার জায়গায় আমার ঘরে আমাকে বসবাস করতে দিচ্ছে না। তার মাদকাসক্ত ছেলেকে দিয়ে আমার ঘরটা দখল করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাকে ভয়-ভীতি, আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। গেল কয়েকদিন আগে আমাকে না জানিয়ে গ্যাস বিল পরিশোধ করার পরও আমার গ্যাস লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেয় আমার আপন ভাই চুন্নু মিয়া। শাহানাজ বেগম আরো জানান, চুন্নু মিয়ার মেয়ে লিপি আক্তার সেই টঙ্গীবাড়ী ধীপুর থেকে এসে গালাগালি করে। বড় ছেলে সোহেল (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত হয়ে এই বাড়িতে উন্মাদ হয়ে প্রতিনিয়ত গালাগালি করছে এবং বসতঘরে মাদকের আড্ডা জমিয়ে রাখে। এ বিষয়ে মহল্লাবাসীও অবগত আছে এবং ছোট ভাই জুয়েল (৪০) একাধিকবার মাদক মামলায় জেলহাজতে গিয়েও কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে নেশাগ্রস্ত পরিবারের সাথে বসত করতে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছি। শাহানাজ বেগমের একমাত্র মেয়ে তানজিলা জানান, আমার ভাই-বোন, বাবা, কেউ নেই, আমরা এতিম। আমার ছোট ভাই সুমনকে বিনা অপরাধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আদালতে সুমন হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। আমার ৫ বছরের শিশু বাচ্চা নোহা ও মাকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে এখানে থাকি। ২০ বছর ধরে টিউশনি করে আমি সংসার চালিয়ে আসছি। বড় মামা জহির খানের সহায়তার উপরও আমাকে নির্ভরশীল হতে হয়। ছোটবেলা থেকেই প্রতিটা মুহূর্ত এখানে আতঙ্কে কাটিয়েছি। বাড়িতে বহিরাগতদের নেশার আড্ডা বসায় সোহেল মিয়া। আমাদের বাড়ির এই অবস্থা দেখে আমার বড় মামা লন্ডন প্রবাসী জহির খান তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের সেপারেশন করার জন্য বাড়ির মাঝ বরাবর একটি দেয়াল নির্মাণ করে দিতে চেয়েছিলেন, চুন্নু মামা তা দেয়নি। এই বাড়িটা আমার বড় মামা জহির খানের নিজের উপার্জিত টাকায় কিনে আমাদের থাকতে দিয়েছে। জহির মামা আমাদের এবং চুন্নু মামার পরিবারের জন্য সবসময় সহায়তা প্রদান করেছেন। এত কিছু করার পরেও জহির মামাকে এই বাড়িতে অবস্থান দেয়া তো দূরের কথা, বাড়িতে আমাদের মধ্যে সেপারেশন করতেও দেয়নি। পরে জহির মামা ও ছোট মামা নুরুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা আমার নামে বাগমাহমুদালি মৌজার ১৮৩,১৯৪ দাগে ৩ শতাংশ জায়গা এবং বড় মামার ঘরটি আমার নামে হস্তান্তর করে দেন। সেই থেকে আমাদের পরিবারের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলছে। এমনকি আমার ছোট ভাই সুমন হত্যাকারীর পরিবারের সদস্যদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে আমার মামা চুন্নু মিয়া। উল্লেখিত দাগে তানজিলা রহমান দীর্ঘদিন যাবত লীজের টাকা পরিশোধ করে আসলেও জয়নাল আবেদীন চুন্নু মিয়া কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
এ ব্যাপারে মোঃ জয়নাল আবেদীন চুন্নু মিয়া জানান, আমার নিজের গ্যাস লাইন কেটেছি। অন্য কারো গ্যাস লাইন কাটিনি। তাকে নির্যাতন করব কেনো ? মহল্লার সকলেই জানে, আমার ছেলে একটু পাগল প্রকৃতির। সে গালাগালি করে কিন্তু কাউকে মারে না।
ওই বাড়ির প্রতিবেশীরা জানায়, বাড়ির দুইপাশে রাস্তা আছে। মাঝখানের সেপারেশন হলে দুষ্টু চুন্নু মিয়ার হাত থেকে শাহনাজ বেঁচে যাবে।
মুন্সীগঞ্জে ভাইয়ের হাতে নির্যাতনের শিকার বোন
আগের পোস্ট