নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন চালিয়ে তানহা মাহমুদা (২১) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে ওই গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল তার স্বামী ফেরদৌস হাসান সোহান (৩০)সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তার ওপরে দিনের পর দিন চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন।
নিহতের বাবা মহিউদ্দিন বলেন, মেয়ের সংসার টেকাতে একাধিকবার নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিলেও থামেনি নির্যাতন। এমন ঘটনায় একাধিকবার ওই গৃহবধূ আইনের আশ্রয় নিতে চাইলেও তাকে বাঁধা দিয়েছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় ওই গৃহবধূকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে তার স্বামী ফেরদৌস হাসান। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন গৃহবধূ তানহাকে মৃত ঘোষণা করলে মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় তার স্বামী। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই ওই গৃহবধূর স্বামী সোহানকে আটক করে পুলিশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত গৃহবধূর শরীরে গাল, গলা, ডান চোখের উপরে, হাতের বাহুর নিচে, পেছনে, কোমড়ের উপরিভাগ থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত ও থুতনির নিচে কবজি পর্যন্ত একাধিক মারধরের চিহ্ন রয়েছে। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের স্বজনেরা।
নিহত গৃহবধূর বড় বোন লুবনা আক্তার বলেন, আমার বোন দীর্ঘদিন ধরে ওর স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু কারো কাছে কোন বিচার পায়নি। সর্বশেষ তাকে জীবনটাও দিতে হলো। আমরা প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই। আরেক বোন ভাবনা আক্তার বলেন, আমার বাবা একজন অসহায় গরীব মানুষ। তবুও আমার বোনের স্বামী সোহান যৌতুকের জন্য বারবার আমাদের পরিবারকে চাপ দিয়ে যেতো। তবুও আমরা বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে কোন প্রতিবাদ করিনি। তারপরেও আমার বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের আরেক স্বজন আব্দুর জব্বার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের জন্য তানহাকে চাপ দেয়ার কথা শুনে এসেছি। তবে কখনো বুঝতে পারিনি ও এমন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হবে স্বামীর হাতে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি।
এই ঘটনায় নিহতের বাবা মহিউদ্দিনকে বাদী করে সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে নিহতের পরিবার জানিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামী ফেরদৌস হাসানকে আটক করা হয়েছে। গৃহবধূর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে ৩টার দিকে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
নিহত গৃহবধূ তানহা মাহমুদা সদর উপজেলার মিরকাদিমের উত্তর কাগজীপাড়া এলাকার মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে। তিনি পঞ্চসারের মালিরপাথর এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে স্বামী ফেরদৌস হাসান সোহান (৩০)কে নিয়ে মিরকাদিমের এনায়েতনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। এদিকে এ ঘটনার পর নিহতের মরদেহ নিয়ে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে দোষীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। পরে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে দ্রুত এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সবাই।
এসময় তারা বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে সদর উপজেলার মিরকাদিমের এনায়েতনগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস হাসানের সাথে প্রেমের টানে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে হয় গৃহবধূ তানহার। নিহত তানহার মানহাফ নামে ১ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।