মুন্সীগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে সড়ক ও সেতু অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মাসুদ রানা : পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ৬ দফার দাবি আদায়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও মুক্তারপুর সেতু অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। এতে সাড়ে ৪ ঘন্টা ধরে সড়ক ও সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ে এ পথের যাত্রী ও চালকেরা। দুই থেকে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী সেতুর ঢালে অবস্থান নিয়ে তাদের ছয় দফা দাবি নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্টের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শুন্যপদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দূরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরীতে “কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়” নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের জন্য একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণনাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন সাজ্জাদুল ইসলাম সাগর বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি দাবি যৌক্তিক। আমরা চাই, সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিক। অন্যথায় আমাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে।
প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইভন শেখ বলেন, গত ২০ মার্চ আমরা সেতু এলাকায় একটি বিক্ষোভ করেছিলাম। সেদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছিল, তারা আমাদের দাবি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিবেন। মাঝখানে এতদিন সময় যাওয়ার পরও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের দাবি যদি পুরোপুরিভাবে মেনে না হয় তাহলে এর চাইতেও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রেজাউল করিম, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি আদায়ে তারা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। আমরা জানার পর পর শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের দাবিগুলো নিয়ে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে কথা বলেন। খুব শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।