কয়েকটি শৌচাগার দোকানে রূপান্তর করে মোটা অংকে পজিশন বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ
মাসুদ রানা : মুন্সীগঞ্জ পৌর মার্কেটে পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শৌচাগারের অভাবে ব্যবসায়ীদেরকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ছুটতে হচ্ছে আশেপাশের বাসাবাড়িতে। এ ছোটাছুটিতে ব্যবসায়ীরা প্রায় সময়ই ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ এখানে শৌচাগারের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বছরের পর বছর ধরে। আগে পৌর মার্কেটে যেসব স্থানে শৌচাগার ছিল, সেখান থেকে বেশ কয়েকটি শৌচাগার দোকানে রূপান্তর করে মোটা অংকে পজিশন বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর এ ঘটনার পর থেকে এখানে শৌচাগারের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কয়েকটি শৌচাগার চালু থাকলেও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এগুলো বেশিরভাগ সময় থাকে নষ্ট ও পরিচ্ছন্ন। শৌচাগারের ভেতরে স্পেসও অনেকটা কম। এসব শৌচাগারে বছরের পর বছর ধরে কোনো চুনকাম না করার কারণেও এর পলেস্তার খসে পড়ছে। নব্বইয়ের দশকে জুবলীখালের মাটি ভরাট করেন পাঁচ পাঁচবারের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক উপমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুল হাই। সেই সময়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত আব্দুল খালেক মাস্টার। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার আয়ের সোর্স হিসেবে এ জুবলীখালের ওপরে পৌরবাসীদের কাছ থেকে পৌর মার্কেটের দোকান বরাদ্দের অগ্রিম টাকা নিয়ে আজকের এ মার্কেট নির্মাণ করা হয়। সেই সময়ে এ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে পৌর মার্কেটে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। দ্বিতল পৌর মার্কেটে আনুমানিক ২৫০টি দোকান রয়েছে। এ দোকান প্রথম দিকে যারা পজিশন কিনে নিয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে চড়া দামে আবার অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। দীর্ঘ বছরে এ মার্কেটের পজিশন বিক্রিতে কয়েক হাতের বদল ঘটেছে। এখন টাকা দিয়েও এখানে দোকান পাওয়া যায় না। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ নামমাত্র মূল্যে এখান থেকে ভাড়া পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। যেখানে চড়া ভাড়ায় দোকান মালিকরা ফুলে ফেঁপে টাকার কুমির হচ্ছে সেখানে পৌর কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালনে অর্থ সংকটে ভুগছেন। আর পৌরসভায় অর্থের সংকট দেখিয়ে শৌচাগারকে দোকানে রূপান্তর করে অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে বলে জানা যায়। কিন্তু একাধিক শৌচাগার বিক্রিতে কি সেই সংকট মোচন হয়েছে? তবে পৌর মার্কেটের বর্তমান ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন যে, আমাদের কাছ থেকে মার্কেটের পজিশন বিক্রির সময়ে শৌচাগার নির্মাণের টাকা নেয়া হয়েছে। তবে কেন এখানে শৌচাগার থাকবে না। এখানকার শৌচাগার আগের মতো ফিরিয়ে দেয়া হউক। যেসব শৌচাগার দোকানের নামে বরাদ্দ দেয়া বা পজিশন বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো পেয়েছে সেই সময়ের আওয়ামী সমর্থিত মেয়র হাজী ফয়সাল বিপ্লবের পচ্ছন্দের লোকেরা। এগুলো আইনগত টেন্ডারের মাধ্যমে সর্ব্বোচ্চ দরে বিক্রি করা হয়নি। এখানে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে। শৌচাগার ভেঙ্গে দোকান তৈরির খবরে সেই সময়ের মেয়রের অনুসারী একজন ব্যক্তি (দর্পণা সিনেমা হলের বিপরীতে কাশিনাথের মিষ্টির দোকানের সাথে) পৌর মার্কেটের দুই পাশের খালি জায়গায় নিজের টাকায় দোকানঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে দেন। তবে ৪ আগস্টের পরে সেই দোকানটি বন্ধ থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ দোকানটিতে সাজ্জাদ হার্ডওয়ারের নাম লেখা দেখতে পাওয়া গেছে। তবে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কতিপয় কর্মচারীরা এখানে মাঝে মাঝে হানা দেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা এখানে কেন হানা দিচ্ছেন সে বিষয়ে এর আশপাশের দোকানদাররা তেমন কিছু বলতে পারেননি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছে অনেক দোকানদাররা। তাতে থলের বিড়াল বের হলেও হতে পারে। রহস্যজনক কারণে সেই সময়ে মার্কেটের তিনটি শৌচাগার ভাঙ্গার মধ্যে পড়েনি। তৎকালীন মেয়রের সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকার কারণে এমনটি হয়েছে বলে অনেকে দাবি করছেন। সেগুলো হচ্ছে ৭৭নং দোকানঘরের রঙয়ের বাহারের সাথের শৌচাগার ঠিকই আছে। আলাউদ্দিনের খাসির হালিমের দোকানের সাথে শৌচাগার ঠিক আছে। ২৪নং দোকানের আরাফাত সাইকেল স্টোরের সাথের দোকানের শৌচাগার বিদ্যমান রয়েছে। যেসব শৌচাগার ভেঙ্গে দোকান তৈরি করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে পৌর মার্কেটের ১২০নং দোকানের সাথে এ আর ওমর টেলিকম। ১১০নং দোকানের সাথে জেলা বিএনপি অফিসের সিঁড়ির সাথে সাফা পুষ্পালয়। স্বপ্ননীড়ের দ্বিতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সাথে সততা ভ্যারাইটিস স্টোর শৌচাগার দোকানে রূপান্তর হয়েছে। সুলতান গ্যাস স্টোর এটি শৌচাগার ছিল, দোকানে রূপান্তরিত হয়েছে। ১০৬নং দোকান ক্লাসিক ফার্নিচারের সাথেরটাও শৌচাগার ছিল, দোকানে রূপান্তর হয়েছে। তবে এটাতে কোন সাইনবোর্ড নেই। ফকির সাইকেল স্টোরের দোকানের সাথেরটা শৌচাগার থেকে দোকান হয়েছে। ৪৭নং দোকানের সাথে আলাক স্টোর শৌচাগার থেকে দোকান করা হয়েছে। জানা যায়, ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন হাজী ফয়সাল বিপ্লব। তখন পৌরসভার এক কর্মচারীর কুপরামর্শে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বেশ কয়েকটি শৌচাগার দোকানে রূপান্তর করে পজিশন বিক্রি করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর এরপর থেকে শৌচাগারের অভাবে দোকান মালিকরা প্রস্রাব ও পায়খানার জন্য ছোটাছুটি করেন আশেপাশের এলাকাতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, পৌর মার্কেটের শৌচাগার ভেঙ্গে দোকান তৈরির পরিকল্পনার কথা শুনে আমরা এখানকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৎকালীন মেয়রের কাছে যাই। কিন্তু আমাদের সাথে সেই সময়ে তিনি এ বিষয়ে খারাপ ব্যবহার করেন।
পৌর মাকের্টের ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ্ব মোঃ জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে গেলে তিনি তৎকালীন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীর কাছে যেতে বলেন।
মোহাম্মদ আলীর কাছে গেলে তিনি বলেন, মেয়র এ বিষয়ে কিছু না বললে আমরা কিছু করতে পারি না।
এভাবে আমাদেরকে কৌশলে ঘোরানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী অফিসার সিকদার মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, আমি অল্প ক’দিন হয় এখানে এসেছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না।
মুন্সীগঞ্জ পৌর মার্কেটে পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে
আগের পোস্ট