নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দিতে গ্রামছাড়া লোকজন গ্রামে উঠতে গেলে হামলার শিকার হয়েছে। গ্রামছাড়া লোকজনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন নেতারাও রয়েছেন। মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকার, শহীদ ফকিরসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী গ্রুপের সমর্থক ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুলসহ ১০ জনকে আটক করেছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মহেশপুরসহ কয়েকটি গ্রামের বিতাড়িত লোকজন গ্রামে উঠতে গেলে চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরকার ও ইউসুফ ফকিরের লোকজন পাল্টা হামলা চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রামে উঠা লোকজনকে পুনরায় গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার জন্য কংসপুরা, রাজারচর, মহেশপুর, আমঘাটা ও মাকোহাটি গ্রামের সন্ত্রাসীরা চরডুমুরিয়া এলাকায় সশস্ত্র প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত বছরের ২৮শে নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা পরাজিত হলে জয়ী চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থকদের দখলে চলে যায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন। ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ৩ শতাধিকের বেশি লোক গ্রামছাড়া হয়ে পড়ে। চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে গ্রামছাড়া লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র দিনযাপন করছেন।
জানা গেছে, কংশপুরা গ্রামের মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার আজাহার মোল্লা, মধ্য মাকহাটি গ্রামের সাবেক মহিলা মেম্বার হালিমা বেগম, রাজারচর গ্রামের জাকির সরকার, চরডুমুরিয়া গ্রামের মোহন মাদবর, রাজারচর গ্রামের সাবেক মেম্বার আলমগীর হোসেন, মাকহাটি গ্রামের আজিজুল মোল্লা, মহেশপুর গ্রামের ইউসুফ ফকির, জাহাঙ্গীর সরকারসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী গ্রামছাড়া হয়ে পড়ে। গ্রামছাড়া লোকজনের মধ্যে অধিকাংশই মহেশপুর গ্রামের।
মধ্য মাকহাটি গ্রামের হালিমা বেগম গতবার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মেম্বার ছিলেন। গত বছরের ২৮শে নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি পুনরায় মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরাজিত হওয়ার পর গত ৩রা ফেব্রুয়ারি মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থক মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা ও তার লোকজন হালিমা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। সাবেক মহিলা মেম্বার হালিমা বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় হালিমা বেগমের স্বামী শাহাবুদ্দিন মাদবর (৬৫)কে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে গ্রামছাড়া করে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা আতাউর রহমাম আতিক মল্লিকসহ কয়েকজনকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২০শে জানুয়ারি মহেশপুর গ্রামের ইউসুফ ফকিরের বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়। পরে ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ অনেকের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেয়ারও অভিযোগ আছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক, তার ছেলে যুবদল নেতা জনি মল্লিক, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার বিএনপি নেতা শহীদুল, মুন্সীকান্দি গ্রামের বিএনপি নেতা উজির আলীসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরহাদ খাঁ ও বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের একচ্ছত্র অধিপতি বনে প্রতিপক্ষ গ্রুপের আওয়ামী লীগের প্রায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মী সমর্থককে গ্রামছাড়া করে রাখেন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বিতাড়িত লোকজন গ্রামে উঠতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালালে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে এবং ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।