নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর তিন শতাধিক সমর্থক গ্রামছাড়া হয়ে পড়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিরোধের জেরে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা গ্রামছাড়া হয়েছে। ইউনিয়নটিতে জয়ী চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থকদের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনার সমর্থকরা গ্রামছাড়া।
গত বছর ২৮ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা পরাজিত হলে জয়ী চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থকদের দখলে চলে যায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন। ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিকের বেশি লোক গ্রামছাড়া হয়ে পড়ে। এসব গ্রামছাড়া লোকদের গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করছে। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসও গ্রাম থেকে বিতাড়িত দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রামে উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। গ্রামছাড়া লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র দিনযাপন করছেন। বর্তমানে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মহেশপুর, মাকহাটি, ছোট মাকহাটি, রাজারচর, কংশপুরা ও চরডুমুরিয়া এলাকার প্রায় তিন শতাধিক মানুষ গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ব্যাপক রক্তপাত ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন শান্ত হয়ে গেলেও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে শান্তি ফিরে আসেনি। নির্বাচনকে ঘিরে ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউনিয়নটির দুইপক্ষের মধ্যে দিনরাত ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মামলা-পাল্টা মামলা হয়। অধিকাংশ মামলায়ই ঘটনায় জড়িত নয়-এমন লোকদেরও আসামি করা হয়। জানা গেছে, কংশপুরা গ্রামের মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার আজাহার মোল্লা, মধ্য মাকহাটি গ্রামের সাবেক মহিলা মেম্বার হালিমা বেগম, রাজারচর গ্রামের জাকির সরকার, চরডুমুরিয়া গ্রামের মোহন মাদবর, রাজারচর গ্রামের সাবেক মেম্বার আলমগীর হোসেন, মাকহাটি গ্রামের আজিজুল মোল্লা, মহেশপুর গ্রামের ইউসুফ ফকির, জাহাঙ্গীর সরকারসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ গ্রামছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গ্রামছাড়া লোকজনের মধ্যে অধিকাংশই মহেশপুর গ্রামের। এ গ্রামের অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মধ্য মাকহাটি গ্রামের হালিমা বেগম গতবার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মেম্বার ছিলেন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি পুনরায় মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরাজিত হওয়ার পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি হালিমা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সাবেক মহিলা মেম্বার হালিমা বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় হালিমা বেগমের স্বামী শাহাবুদ্দিন মাদবর (৬৫)-কে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে গ্রামছাড়া করে দেয়। এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি মহেশপুর গ্রামের ইউসুফ ফকিরের বাড়িঘর ভাঙচুর করা করা হয়। পরে ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। গ্রামছাড়া লোকজন কবে আবার গ্রামে যেতে পারবে এবং নিজের বাড়িতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করবে-এ প্রশ্নের উত্তর জানেনা কেউ।
এ ব্যাপারে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি তার মোবাইলে ফোনে ম্যাসেজও পাঠানো হয়, কিন্তু তিনি তার উত্তর দেননি।
মোল্লাকান্দির গ্রামছাড়া লোকজনের বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, সবাই মিলেমিশে শান্তিতে থাকুক এটা আমি চাই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস জানান, মোল্লাকান্দির বিষয়ে আমি জ্ঞাত রয়েছি। দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ তাদের ঘরে থাকবে, দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এজন্য তাদের গ্রামছাড়া করে রাখবে-এটা ঠিক নয়। দলমতের ঊর্ধ্বে গ্রামছাড়া মানুষগুলোকে তাদের গ্রামে থাকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে তিনি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম জানান, মোল্লাকান্দির ঘটনায় আগে দুইপক্ষের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা বাড়িতে নেই, তারা বাড়িতেই থাকবে। কেউ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।